ভ্যাটে আরও ছাড় আসছে

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনে আরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার কমানো হচ্ছে—ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত তা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নতুন ভ্যাট হার চূড়ান্ত করবেন তিনি।

হার কমানোর পাশাপাশি ভ্যাট আইনে আরও ছাড় আসছে। নতুন আইনে যে ভ্যাট অব্যাহতির পণ্য ও সেবার তালিকা আছে, সেটি আরও বড় হচ্ছে। আরও ৭০টি নতুন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার ভ্যাটমুক্ত সীমা এবং টার্নওভার করের পরিধি—দুটোই বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভ্যাট হার একাধিক হবে কি না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘একাধিক পারব না। ভ্যাট হার ১ শতাংশ কমালে সম্ভব। এর বেশি কমাতে গেলে নতুন করে সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। যে জন্য দুই মাস সময় লাগবে। এখন দেখছি, হার কমানো বেশ কষ্টকর হবে।’ ভ্যাট কমালে যে রাজস্ব কমবে তা ‘বিগ’ বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার ভ্যাট হার নিয়ে আলোচনা করবেন।

নতুন আইনে মৌলিক খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন, চিকিৎসা ও শিক্ষা, কৃষি, মৎস্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাতের ১ হাজার ৮৭৪টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি আছে। শেষ মুহূর্তে আরও ৭০টি পণ্য ও সেবা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভোজ্যতেল, হার্টের রোগীর রিং, দেশি সফটওয়্যার, ডায়ালাইসিসের কৃত্রিম কিডনি ইত্যাদি।

বর্তমানে ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় না। বিভিন্ন স্তরের পরিবর্তে এক স্তরেই ব্যবসায়ীরা সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেন। বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেল আমদানি থেকে শুরু করে সরবরাহ ও বিক্রি—সব পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হতে পারে। এনবিআর হিসাব করে দেখেছে, এতে বছরে সাড়ে তিন শ কোটি টাকার মতো রাজস্ব ক্ষতি হবে।

অন্যতম নির্মাণসামগ্রী এমএস রডের ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রডের কাঁচামাল আমদানিসহ অন্য পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হবে। বর্তমানে টনপ্রতি ট্যারিফ মূল্যভিত্তিক ভ্যাট দিতে হয়। বছরে এই খাতটি থেকে ১০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পায় এনবিআর।

দেশি সফটওয়্যার শিল্পকেও ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান থেকে সফটওয়্যার কিনলে বর্তমানে ৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট দিতে হয়। স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্পকে সুরক্ষা দিতেই সফটওয়্যার কিনলে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।

নতুন আইন ভ্যাট মওকুফের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ক্যানসার, ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠরোগ নিরোধক ওষুধ; বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ভ্যাকসিনসহ নানা ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধে নতুন আইনে অব্যাহতি দেওয়া আছে। এখন এনবিআর আরও কিছু জীবন রক্ষাকারী ও যন্ত্রপাতিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। যেমন, হার্টের রোগীদের জন্য রিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রিং কিনতে এখন ভ্যাট দিতে হয়। এটি উঠে যাচ্ছে। আবার প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে কৃত্রিম কিডনি সংযোজন করতে হয়। এই কৃত্রিম কিডনির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। আবার রক্তের ব্যাগেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কিছু স্বস্তি দিতে চায় এনবিআর। ৭৫০ বর্গফুটের কম আয়তনের ফ্ল্যাট কেনায় ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। এখন এই ধরনের ফ্ল্যাট কিনতে ক্রেতাকে দেড় শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। অন্যদিকে জমি কেনায় কোনো ভ্যাট থাকছে না। এ ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাটমুক্ত বার্ষিক লেনদেনের সীমা কিছুটা বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা করা হচ্ছে। আইনে এ সীমা ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৩ শতাংশ টার্নওভার করের সীমাও পুনর্বিন্যাস করে ৩৬ লাখ টাকা থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নতুন আইনে এ সীমা ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার কথা বলা আছে।

নতুন আইনে ১৭০টি পণ্য ও সেবা ছাড়া অন্য পণ্য ও সেবায় সম্পূরক শুল্ক ওঠে যাওয়ার কথা। এনবিআর এখন সেই অবস্থান সরে আসছে। বর্তমানে ১৪ শর বেশি পণ্য ও সেবায় সম্পূরক শুল্ক আরোপ আছে। আগামী অর্থবছরেও এটি অব্যাহত রাখা হতে পারে। তবে ভ্যাট হার কমানোর রাজস্ব ক্ষতি পোষাতে কয়েকটি পণ্য ও সেবায় সম্পূরক শুল্ক হার বাড়তে পারে। যেমন, মোবাইল ফোন সেবা, সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্য। সম্পূরক শুল্কের বিদ্যমান তালিকাটি আগামী অর্থবছরেও রাখা হলে এনবিআরের অবশ্য লাভই হবে। কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বাড়তে পারে।