কোথাও নির্ধারিত দামে, কোথাও বেশি দামে মাংস বিক্রি

দুপুর ১২টা। রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের একটি মাংসের দোকান। এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকা শুনে এক ক্রেতা দোকানিকে বললেন, ‘আধা কেজি মাংস দেন, হাড় ছাড়া।’ এ কথা শুনে গজগজ করতে করতে মাংস কাটতে শুরু করেন দোকানি মো. শামীম হোসেন। বিড়বিড় করে বলেন, ‘মাংস নেবে আধা কেজি, আবার দিতে কয় হাড় ছাড়া।’

অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রহিম মোল্লা টাউন হল সুপার মার্কেটের মাংসের দোকান থেকে এক কেজি গরুর মাংস কিনলেন ৪৭৫ টাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার নগরের দুই বাজারে এই দুই দরে গরুর মাংস বিক্রি হয়। হাতিরপুল বাজার, কারওয়ান বাজারেও গরুর মাংস ৪৭৫ টাকা কেজি। আরও কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪৭৫ থেকে ৫০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে নতুন করে দাম না বাড়লেও বিভিন্ন বাজারের অনেক দোকানেই নির্ধারিত এই দরের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ২৫ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। কিন্তু তা তদারকি নেই।

চাঁদাবাজি বন্ধসহ চার দফা দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে মাংস ব্যবসায়ীদের কয়েক দিনের ধর্মঘটের আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪২০ থেকে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু ধর্মঘটের পর এক লাফে দাম বাড়ানো হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।

মোহাম্মদপুরের টাউন হল সুপার মার্কেট থেকে মাংসের ক্রেতা রহিম মোল্লা বললেন, মাংসের দাম এখনো অনেক বেশি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কেনার সামর্থ্যের বাইরে।

বিক্রেতারা বললেন, রমজান মাসে মাংস বিক্রি কম হয়। কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা আবু সিদ্দিক বলেন, ‘রোজার আগে ডেইলি চাইর-পাঁচটা গরু চলতো, এখন দুইটাও শেষ হয় না।’

তবে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি ২৬ রমজানেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর ঈদকে কেন্দ্র করে মাংসের চাহিদা ও দাম—দুটোই বাড়বে বলে জানালেন বিক্রেতারা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় গরুর মাংসের গড় খুচরা দাম ২০১৪ সালে ৩০০ টাকা, ২০১৫ সালে ৩৯৯.৫০ টাকা, ২০১৬ সালে ৪২৬.৪৭ টাকা ছিল। গত মে মাসে লাফিয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২৫.৫০ টাকায়।

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা না পাওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি গাবতলী হাটে চাঁদাবাজি, অনিয়ম বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বেশি দামে মাংস কিনে মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২৫ টাকা। হাতিরপুল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে এই দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ৭৫০ টাকা। বিক্রেতারা বললেন, খাসির মাংসের চাহিদা কম।

তবে মুরগির চাহিদা কিছু বেড়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা বেশিতে বিক্রি করছেন। এ ক্ষেত্রে ক্রেতারা অসহায়। প্রতি কেজি ১৫৫ টাকায় নির্ধারণ করা হলেও বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির কেজি ৪০০ টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাউল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মাংসের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। বাজার তদারকিতেও বেশ কিছু টিম মাঠে কাজ করছে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সচেতনতাও জরুরি।