মোবাইল ফোনে সারচার্জ!

উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত—সবাই কমবেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ধনী-গরিবনির্বিশেষে মোবাইল ফোন এখন দৈনন্দিন জীবনে অনেকটাই অপরিহার্য হয়ে গেছে। আগামী ১ জুলাই থেকে দেশি-বিদেশি সব ধরনের মোবাইল ফোন সেটের আমদানি ও সরবরাহের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ বসানোর বিধিমালা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সারচার্জের নাম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উন্নয়ন সারচার্জ।

এত দিন আমদানিকারকেরা মোবাইল ফোনের ওপর সারচার্জ দিতেন। এখন দেশি কোম্পানি মোবাইল ফোন তৈরি করলেও সারচার্জ দিতে হবে। ২০১৫ সালের উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি আইনের আওতায় এই সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। তখন থেকেই আমদানি পর্যায়ে এই সারচার্জ আদায় করা হতো। মূলত দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এই সারচার্জ ও লেভি আইন করা হয়। সাধারণত বেশি সম্পদধারীদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভোগ করার ক্ষেত্রেই সারচার্জ আরোপ হয়। শুল্ক-করের বাইরে এটি একধরনের অতিরিক্ত মাশুল।

এনবিআরের নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, আমদানিকারক কিংবা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসেই আমদানি বা উৎপাদনের বিপরীতে সারচার্জ দিতে হবে। নির্দিষ্ট হিসাবে ট্রেজারি চালান বা ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় সারচার্জের অর্থ পরিশোধ করা যাবে। যে মাসের সারচার্জ দেওয়া হবে এর পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মাধ্যমে সারচার্জের বিবরণী জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশে আট থেকে সাড়ে আট কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। সম্পদশালীদের পাশাপাশি এখন নিম্নবিত্তরাও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাই আমদানি ও দেশি উৎপাদন পর্যায়ে সারচার্জ বসলেও তা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকেই দিতে হয়। এর ফলে নিম্নবিত্তরাও সারচার্জের আওতায় পড়ে যান।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী মোবাইল ফোন আমদানিতে আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করেছেন। ১ জুলাই থেকে মোবাইল ফোন আমদানি করলে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হবে।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল ফোন এখন নিম্নবিত্ত মানুষও ব্যবহার করেন। সারচার্জের উদ্দেশ্য হলো, যাঁরা বেশি সম্পদশালী, তাঁরা সারচার্জ দেবেন। কিন্তু মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ধনী-গরিব সবার ওপরেই সারচার্জ আরোপ হচ্ছে। এর ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে গরিব মানুষের সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন সেট পাওয়া আরও কঠিন হলো।

এদিকে ২০১৪ সালে পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করেছিল এনবিআর। ২০ জুন ওই দুটি সারচার্জ বিধিমালা বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে নতুন করে একই ধরনের দুটি সারচার্জ আদায় বিধিমালা জারি করেছে এনবিআর। যেখানে কীভাবে কোন ধরনের পণ্যের ওপর সারচার্জ আদায় করা হবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। ২০১৭ সালের স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বিধিমালায় বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে তামাক, তামাক পাতার আমদানি কিংবা উৎপাদন পর্যায়ে ১ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। এ ছাড়া বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, খইনি, সাদাপাতা, সিগার, হুক্কায় ব্যবহৃত তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্যেও সারচার্জ আরোপ হবে। আর ২০১৭ সালের পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের ওপরও ১ শতাংশ হারে সারচার্জ বসবে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে এনবিআর পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করবে। পরে ওই তালিকা প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে এনবিআর।