এই নামে চেনা যায়?

নামে আসলে কি থাকে? এককথায় অনেক কিছু। এই নাম দিয়েই আমরা সবকিছুর পরিচয় চিহ্নিত করি। অনেক সময় নামেই মেলে জগৎজোড়া পরিচিতি। বিশ্বে বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান শুরুর দিকে ছিল ভিন্ন নামে। এখন তাদের যে নামে মানুষে চেনে, আগের নাম শুনলে হয়তো নাক সিঁটকাবেন তাঁরা। 

আসুন জেনে নিই এমনই কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পুরোনো নামের বৃত্তান্ত—

গুগল ছবি: সংগৃহীত
গুগল ছবি: সংগৃহীত


১. ব্যাকরাব

ইন্টারনেটে এখন বিশ্বের ১ নম্বর সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি হলো গুগল। সেই গুগল একসময় ইন্টারনেটের ব্যাক লিংক নিয়ে কাজ করত। তাই কোম্পানির নাম দেওয়া হয়েছিল ব্যাকরাব। একটি ওয়েবসাইট আরেকটি ওয়েবসাইট থেকে যেসব লিংক পায়, সেগুলোকেই বলা হয় ব্যাক লিংক। একটি ওয়েবসাইটের এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজে ব্যাক লিংকের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে এ নিয়েই কাজ করত গুগল। তবে ব্যাকরাব নামটি বেশি দিন টেকেনি। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি নাম বদলে গুগল রাখে। ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এই নাম ট্রেডমার্ক হিসেবে গৃহীত হয়।

ইয়াহু ছবি: রয়টার্স
ইয়াহু ছবি: রয়টার্স

২. জেরি অ্যান্ড ডেভিডস গাইড টু দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব
এই কোম্পানির এখনকার নাম ইয়াহু। পুরোনো নামে যখন ছিল তখন কোম্পানিটি অন্যান্য ওয়েবসাইটের একটি তালিকা হিসেবে কাজ করত। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র জেরি ইয়ং ও ডেভিড ফিলো কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯৫ সালের ২ মার্চ জেরি অ্যান্ড ডেভিডস গাইড টু দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের নাম বদল করে রাখা হয় ইয়াহু। গুগলের রাজ্য বিস্তারের আগে এটিই ছিল বিশ্বের ১ নম্বর সার্চ ইঞ্জিন। এখন অবশ্য কোম্পানিটির বাজার পড়তির দিকে। ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা জেরি ও ডেভিড ইয়াহু বিক্রিই করে দিয়েছেন। এটি কিনেছে ভেরাইজন কমিউনিকেশনস।

পেপসি ছবি: রয়টার্স
পেপসি ছবি: রয়টার্স

৩. ব্র্যাডস ড্রিংক
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলাইনা রাজ্যের ওষুধ বিশেষজ্ঞ ক্যালেব ডেভিস ব্র্যাডহাম আবিষ্কার করলেন সুপেয় তরল পদার্থের এক নতুন মিশ্রণ। চিনি, পানি, ক্যারামেল, লেবুর রস, জায়ফল ও আরও কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এই নতুন পানীয়। আবিষ্কারক প্রথমে এর নাম দিয়েছিলেন ব্র্যাডস ড্রিংক। দ্রুত এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৯৮ সালে ব্র্যাডহাম পানীয়টির নতুন নাম দেন ‘পেপসি-কোলা’। ব্র্যাডহাম মনে করতেন তাঁর তৈরি করা পানীয়টি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী এবং বদহজম প্রতিরোধে সাহায্য করে।

নাইকি ছবি: রয়টার্স
নাইকি ছবি: রয়টার্স

৪. ব্লু রিবন স্পোর্টস
এই কোম্পানিটি এখন নাইকি নামে পরিচিত। এটি এখন খেলার জুতা তৈরির জন্য বিখ্যাত। ১৯৬৪ সালে ব্লু রিবন স্পোর্টস নামে যখন কোম্পানিটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন কিন্তু এটি জুতা তৈরি করত না। বরং একটি জাপানি কোম্পানির পণ্যের পরিবেশক হিসেবে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ব্লু রিবন স্পোর্টস নিজেরা জুতা তৈরি করা শুরু করে। ওই সময় কোম্পানির নামও পরিবর্তন করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইট ও বিল বাওয়ারম্যান নতুন নাম রাখেন নাইকি। প্রাচীন গ্রিসে জয়ের দেবী হলেন নাইকি। সেই নামেই পরিচিত হতে শুরু করে ব্লু রিবন স্পোর্টস।

৫. অ্যামাজিন সফটওয়্যার
অ্যাপল কোম্পানির কৌশল ও বিপণন বিভাগের সাবেক পরিচালক ছিলেন ট্রিপ হকিনস। ১৯৮২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কম্পিউটার গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজিন সফটওয়্যার। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই নাম আর পছন্দ হচ্ছিল না হকিনসের। নামের মাধ্যমে গেমসের বিষয়টি স্পষ্ট করে বোঝাতে প্রতিষ্ঠানের নতুন নাম হয় ইএ গেমস। এখন এই নামেই গেমসের প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।

৬. স্ট্যাগ পার্টি
হিউ হেফনার ১৯৫৩ সালে পুরুষদের জন্য একটি ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম দেওয়া হয় স্ট্যাগ পার্টি। ১৯৩০-এর দশকে স্ট্যাগ অ্যাট ইভ নামের একটি কার্টুনের বই প্রকাশিত হয়েছিল। তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ম্যাগাজিনের নাম পছন্দ করেছিলেন হেফনার। কিন্তু ওই সময় পুরুষদের আরও একটি ম্যাগাজিনের নাম ছিল স্ট্যাগ। তাদের প্রতিবাদের মুখে পড়ে শেষে নাম বদলান হেফনার। কে জানত, ওই নামেই পুরুষদের অন্য সব ম্যাগাজিনকে পেছনে ফেলে দেবে এটি! নাম বদলে রাখা হয় প্লেবয়।

ডেল ছবি: রয়টার্স
ডেল ছবি: রয়টার্স

৭. পিসিজ লিমিটেড
বিখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হলো ডেল। প্রথমে এর নাম ছিল পিসিজ লিমিটেড। ১৯৮৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন মাইকেল ডেল। তবে বেশি দিন এই নাম পছন্দ হয়নি তাঁর। ওই বছরের শেষের দিকে পিসিজ লিমিটেড বদলে নিজের নামের শেষাংশ নির্বাচন করেন মাইকেল ডেল।

আমাজন ডট কম ছবি: রয়টার্স
আমাজন ডট কম ছবি: রয়টার্স

৮. রিলেন্টলেস
কম্পিউটারের ব্রাউজারে যদি আপনি রিলেন্টলেস ডট কম টাইপ করেন, তাহলে দেখবেন দ্রুত সেটি আমাজন ডট কমে চলে যাচ্ছে। এই রিলেন্টলেস হলো আমাজনের আগের নাম। প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এই নামটি পছন্দ করলেও তাঁর সহকর্মী বন্ধুদের কাছে নামটি ছিল অলক্ষুণে। এরপর নাম বদলে অ্যাবরাকাডেবরা রাখার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষতক আমাজনের পেছনেই ভোট পড়ে বেশি। কারণ আমাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী (পানির পরিমাণের দিক থেকে)। সুতরাং আমাজন নাম হলে তা প্রতিষ্ঠানটির কাজের বিশাল পরিধিকে বোঝাবে—এই ছিল যুক্তি।

মেন্টালফ্লস অবলম্বনে অর্ণব সান্যাল