কাঁচা মরিচ এখন লাটসাহেব

কাঁচা মরিচ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
কাঁচা মরিচ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

কাঁচা মরিচ যেন এখন লাটসাহেব। তার ঠাটই আলাদা। নজরানা এখন দ্বিগুণ। নিম্ন আয়ের মানুষের মলিন বাজারের থলিতে ঢুকতে ভারি অনীহা তার।
রাজধানীর বাজারে কয়েক দিনের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে গেল কাঁচা মরিচের দাম। পবিত্র আশুরা ও দুর্গাপূজার ছুটির আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিকোতেন তিনি। এখন পাইকারি দোকানগুলোতেই কেজিপ্রতি ২০০ টাকা চাইছেন লাটের এজেন্টরা (বিক্রেতারা)। একই বাজারের খুচরা দোকানে তা ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কম পরিমাণ কেনাকাটায় খুবই বিরক্ত এই লাটসাহেব। ফলে তখন দাম পড়ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।

কারণ খুচরা বাজারে ক্রেতারা এক শ গ্রাম বা আড়াই শ গ্রাম করে কাঁচা মরিচ কেনেন। বিক্রেতারা ১০০ গ্রাম মরিচের দাম ৩০ টাকা এবং ২৫০ গ্রামের দাম ৭০ টাকা চাইছেন।

কী বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা? দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ একেবারেই কম থাকা ও ভারত থেকে আমদানি কয়েক দিন বন্ধ থাকায় দাম এত বেড়ে গেছে। তা ছাড়া বগুড়ার হাটেও গুমোর কম নয় এই লাটের। সেখানেও দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
দেশের চাহিদা মূলত দেশি কাঁচা মরিচই পূরণ করে। তবে বর্ষার শেষ দিকে এবং রমজান মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশ ভালো পরিমাণে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজারে যখনই দাম বেড়ে যায়, তখনই আমদানিকারকেরা মরিচ আমদানি করেন।
কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকাল ২০০ টাকা কেজি দরে ভারতীয় মরিচ বিক্রি করছিলেন বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন। তিনি বললেন, দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ একেবারেই নেই। একে তো বন্যায় মরিচের খেত নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে বৃষ্টিতে মরিচ তোলা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতে দুই ট্রাক ভারতীয় কাঁচা মরিচ বাজারে না ঢুকলে কেজিপ্রতি দর ৩০০ টাকা হতো।
বাজার ঘুরে দু-একটি দোকান ছাড়া দেশি লাটের (কাঁচা মরিচ) দেখা মিলল না। ভারতীয় ছোট ও মোটা আকৃতির এক ধরনের কাঁচা মরিচ বাজারে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য এ মরিচের চাহিদা খুচরা বাজারে কম বলে জানান বিক্রেতারা।
এদিকে ছয় দিন বন্ধ থাকার পর গত মঙ্গলবার থেকে বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু কাঁচা মরিচ খুব বেশি আসছে না।
প্রথম আলোর বগুড়া প্রতিনিধি জানালেন, জেলার দুটি পাইকারি বাজার মহাস্থানহাট মোকাম ও নয়মাইলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদার ও ফড়িয়ারা।
একদিকে কৃষকেরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেশি পেয়েও তাঁদের খরচ উঠছে না। অন্যদিকে লাটের (কাঁচা মরিচের) খাঁই মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
জেলার সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম মহাস্থানহাটে গতকাল বুধবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ গড়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগে যা ৬৫ টাকা ছিল।