পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পক্ষে সংসদীয় কমিটি

বেসরকারি খাতের দি ফারমার্স এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে কমিটি চায় না, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাক। প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পুনর্গঠন করতে বলেছে। কমিটি বলেছে, অনিয়মের দায় পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে।

আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৩ সালে বেসরকারি খাতে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে আছে ফারমার্স ব্যাংক। ওই বছরের জুনে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ গত জুন শেষে হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের এপ্রিলে যাত্রা করা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৯১ কোটি টাকা।

সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। নিচ্ছে উচ্চ সুদে আমানত। নিয়ম মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে না পারায় গত এক বছরে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা গুনেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধেরও ক্ষমতা হারিয়েছে ব্যাংকটি।

ব্যাংকটির দায় পরিশোধের সক্ষমতা নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাধারণ আমানতকারী ও বিভিন্ন ব্যাংক হতে উচ্চ সুদে আমানত নেওয়া এবং ধার করে বর্তমানে টিকে আছে ফারমার্স ব্যাংক। ফলে ব্যাংকটি পুরো ব্যাংক খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ (সিস্টেমেটিক রিস্ক) তৈরি করেছে, যা আমানতকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

এদিকে প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূলধন জোগান থেকে ঋণ দেওয়া সব ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসানকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে। অনিয়মের জন্য এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেওয়ান মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত শুনানি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংক কেন আগ্রাসী ব্যাংকিং করছে?
এ ছাড়া মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক কেন আগ্রাসী ব্যাংকিং করছে, তা জানতে চেয়েছে কমিটি। কোন খাতের কী ধরনের গ্রাহককে, কী পরিমাণ ঋণ দেওয়া হচ্ছে, তা আগামী বৈঠকে জানাতে বলা হয়েছে।

চেয়ারম্যানদের সভায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরাছত আলী সভায় উপস্থিত হননি। ফরাছত আলী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

বৈঠক শেষে আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংক দুটি বেসরকারি খাতের হলেও জনগণের অর্থ জমা রয়েছে। অনেক মানুষ ব্যাংক দুটিতে টাকা জমা রেখেছেন। সংসদীয় কমিটি চায় না কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাক। প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করা যেতে পারে। পরিচালনা পর্ষদকেও অনিয়মের দায় নিতে হবে।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই ব্যাংকে অবিশ্বাস্য জালিয়াতি হয়েছে। পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে সভার কার্যবিবরণী পাস করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে অনিয়মের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হামিদ মিঞা উপস্থিত ছিলেন। ফারমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দুই এমডি।