সস্তা শ্রম দিয়ে পোশাক খাত ধরে রাখা কঠিন: মির্জ্জা আজিজুল

এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

সস্তা শ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পকে বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২২ শতাংশ উৎপাদন খাত থেকে আসে। এর মধ্যে পোশাকশিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। সস্তা শ্রমের কারণেই পোশাক খাত এতটা উন্নতি করেছে। তবে সস্তা শ্রম দিয়ে পোশাকশিল্পকে বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে আছে চীন। তবে এক ও দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। চীনের পোশাক রপ্তানি ১৪০ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশের ২৭ থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার। এদিকে পোশাকে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করেছে। তাই আমাদের সক্ষমতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ডেইলি স্টার সেন্টারের সেমিনার হলে ‘জাতীয় উন্নয়নে উচ্চশিক্ষার অবদান’ শীর্ষক সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিক, যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ নিয়ামত ইলাহী প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসীদের মাধ্যমে আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আসে। তবে মাথাপিছু রেমিট্যান্স আয়ের দিক দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের চেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে। কারণ হচ্ছে আমাদের রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে। আর এখানে আমরা অদক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকদের পাঠাই। সে জন্য রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়াতে হলে উচ্চশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়কে খুঁজে দেখতে হবে কী ধরনের দক্ষ জনবল দরকার। এ কাজগুলো কিন্তু বিনা পয়সায় হবে না। সরকারকে তাই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আদৌ কাজ হচ্ছে কি না, সেটি তদারক করার ওপর জোর দেন তিনি।

শফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ৩০ বছর ধরে পোশাক রপ্তানি করছি। কিন্তু সেটিকে টার্গেট করে সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সাবজেক্ট খুলতে পারেনি। তাদের চিন্তার মধ্যে কি আসেনি, এই পোশাক খাতে কাজ করতে বিদেশি পাঁচ লাখ লোক আসবে? এটি বিরাট গ্যাপ।’ তিনি শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষাকে জোর দিতে পরামর্শ দেন।