এ পর্ষদ রেখে সহায়তা নয়

অর্থসংকট কাটাতে ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তহবিল চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিল ফারমার্স ব্যাংক। আর ১৪ নভেম্বর রাতে এ নিয়ে গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে বহাল রেখে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে অর্থ সহায়তা করা সম্ভব নয়।

তাহলে নগদ অর্থসংকটে হিমশিম খাওয়া ব্যাংকটি চলবে কী করে? এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ, নতুন করে আর ঋণ না দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী হওয়ার।

মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এর আগেও অবশ্য ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে ফারমার্স ব্যাংক।

গত মঙ্গলবার রাতে অফিস সময়ের পরে গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে তাঁর কক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও এস এম মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোর পরিচয় ও বিষয় শুনেই তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে নারাজ।

এদিকে ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির প্রতিনিয়ত অবনতি ঘটছে। একদিকে ঋণের অর্থ ফেরত আসছে না, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তেমন একটা আমানত মিলছে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ব্যাংকটি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে আমানত সংগ্রহ করেছে, তা ফেরত দেওয়ারও ক্ষমতা নেই ব্যাংকটির। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ফারমার্স ব্যাংক পুরো ব্যাংক খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ (সিস্টেমেটিক রিস্ক) তৈরি করেছে।

অর্থ সহায়তা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লেখা চিঠিতে ফারমার্স ব্যাংক লিখেছে, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় আমানত সংগ্রহ করা সহজ হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি তহবিল থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত চেয়েছে।

চিঠির মাধ্যমে অর্থ সহায়তা চাওয়ার পরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে অতীত নজিরগুলো খতিয়ে দেখে। যেখানে সর্বশেষ উদাহরণ হয়ে আছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংক)। ২০০৬ সালের জুনে ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে বাঁচাতে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদকে সরিয়ে সেখানে প্রশাসক বসিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটির তারল্য সংকট কাটাতে ২৭০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে দ্য ওরিয়েন্টাল ব্যাংক (পুনর্গঠন) স্কিম গঠন হয়। তা সত্ত্বেও আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে পারেনি ব্যাংকটি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া ২৭০ কোটি টাকাও আদায় হয়নি। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, ঋণমানের উন্নয়ন না হলে তারল্য সহায়তা দিয়ে ব্যাংকের আর্থিক সূচক ভালো করা যায় না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে অর্থ সহায়তা চান। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়, সংকটে পড়া ব্যাংককে ট্রেজারি বিল, বন্ডের বিপরীতে তারল্য সহায়তা দেওয়ার সুযোগ আছে। তা হবে ৯০ দিন মেয়াদি। তবে ফারমার্স ব্যাংকের সহায়তা নেওয়ার মতো বিল, বন্ড নেই। এর বাইরে অর্থ সহায়তা দিতে গেলে ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অপসারণ করে প্রশাসক বসিয়ে সেই সহায়তা দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রস্তাবে রাজি হলে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে হবে। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি।

এ সময় গভর্নর তহবিল ও ইইএফ তহবিল থেকে আমানত চাওয়া হয়। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব তহবিলের অর্থ অন্য ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে। অন্য ব্যাংক থেকে তুলে তা ফারমার্স ব্যাংককে দেওয়ার সুযোগ নেই।