ঘোষিত দামেই ডলার বিক্রি

ডলার
ডলার

প্রতিনিয়ত চড়া হচ্ছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই গত ছয় মাসে ডলারের দাম বেড়েছে ২ টাকা। গতকাল বুধবার দিন শেষে প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়ে হয়েছে ৮২ টাকা ৩০ পয়সা। তবে খোলাবাজারে তা ৮৫ টাকা ছাড়িয়েছে। সংকটের কারণে ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়ছে ভোগ্যপণ্যের আমদানি পর্যায়েও। এ অবস্থায় ঘোষিত দামেই ডলার বিক্রি করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। ডলারের চলমান সংকট মেটাতে গতকাল এক জরুরি সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাফেদার চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, যা ভুল হওয়ায় হয়ে গেছে। এখন সব ব্যাংককে বলা হয়েছে, ঘোষিত দামে ডলার বিক্রি করতে। এতে সবাই একমত হয়েছে।

ডলারের দামের মূল্য নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় গত মঙ্গলবারে ১৭ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি এ সভার আয়োজন করে বাফেদা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়েছে, আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকগুলো ডলারের যে মূল্য ঘোষণা দিচ্ছে, তার চেয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছে। এতে করে বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়। আর ব্যাংকগুলো মুনাফা বাড়াতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব আমদানি নিষ্পত্তি করতে চায়। মূলত বছর শেষে ভালো মুনাফা করতেই এই প্রবণতা শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। যদিও হঠাৎ খাদ্য ও অবকাঠামো নির্মাণপর্যায়ে আমদানি বেড়ে গেছে। কমেছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি খাতের ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনসহ ১৭ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলো হলো—এবি, এনসিসি, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল, ইউসিবিএল, ব্র্যাক, ইস্টার্ণসহ আরও তিন ব্যাংক।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, সংকট থাকার কারণে দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া এখন বৈদেশিক মুদ্রার বাজার অনেক বড় হয়ে গেছে। নিয়মনীতির মধ্যে এ বাজার সব সময় চলবে না। এ বাজার পরিচালনা-কৌশলে পরিবর্তন আনার সময় এসেছে।

আনিস এ খান বলেন, ‘হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘোষিত দামের সঙ্গে অনেক সময় সমন্বয় করা যায়নি, এটা সত্য। এ জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চাইব।’

এদিকে ডলারের সংকট কমাতে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৭২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ ২০১২ সালের জুলাই থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে আসছিল। ডলারের সংকট কাটাতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার ২৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি ডলার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি হয়েছে। আর অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ। বড় এ আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, কয়েকটি ব্যাংক ডলারের দাম বলছে এক রকম, বাস্তবে রাখছে আরেক রকম। অনেক ব্যাংক অফশোর ইউনিটে দীর্ঘ মেয়াদে ডলার দিয়ে রেখেছে। এ কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দর এখন স্থিতিশীল। তবে ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। এরই মধ্যে মসলাজাতীয় কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির সময় প্রতি ডলারের যে বিনিময়মূল্য হিসাব করেছেন, তার চেয়ে এখন ২-৩ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে।