ফারমার্স ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন

পর্ষদে পরিবর্তনের পর বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা জানতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়, গুলশান ও মতিঝিল শাখায় বিশেষ পরিদর্শন শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির প্রকৃত চিত্র পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে ব্যাংকটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে এহসান খসরুকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। প্রাইম ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিলেই তাঁর নিয়োগ কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ব্যাংকটির পরিচালকেরা গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সাড়ে ৬ কোটি টাকা আমানত জমা করেছেন ব্যাংকে। এ ছাড়া প্রায় ১৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের বাইরের সহায়তা নিচ্ছে ব্যাংকটি।

ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এ ছাড়া ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদ ছাড়তে হয়। ফারমার্স ব্যাংকের পরিবর্তনের এ ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর নতুন চেয়ারম্যানসহ অন্য পরিচালকেরা গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সভা করেন। ওই সভায় ব্যাংকটির আর্থিক সংকট কাটাতে পরিচালকদের আমানত রাখতে ও ঋণ আদায় জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংক আমানত, ঋণ, খেলাপি হিসাব ও জনবলের যে তথ্য সরবরাহ করছে, তা বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই ব্যাংকটির বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া কারা ঋণ নিল, সুবিধাভোগী কারা ও ঋণগুলোর প্রকৃত অবস্থা কী, তা জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই গতকাল থেকে বিশেষ পরিদর্শন শুরু করা হয়েছে। এবারের পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের হল-মার্ক, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি পরিদর্শনেও এ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া পরিদর্শন বিভাগের বাইরের কর্মকর্তাকেও যুক্ত করা হয়েছে এবার।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। অনুমোদন পাওয়ার আগেই সাইনবোর্ড লাগিয়ে দপ্তর খুলে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছিল ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর বছর না ঘুরতেই ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে ব্যাংকটির প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম ধরা পড়ে, যা এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। মার্চ-জুন সময়ে ব্যাংকটি খেলাপি গ্রাহকদের থেকে মাত্র ৭ কোটি টাকা আদায় করেছে।

সূত্র জানায়, তারল্যসংকটে পড়ে নিয়মমতো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া গ্রাহকেরা চেক দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না। এসব কারণে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকে কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তার জবাব পাওয়ার পর এখনো পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।