এলএনজির দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

এশিয়ার বাজারে বেড়ে গেছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) গ্যাসের দাম উঠেছে সাড়ে ১০ মার্কিন ডলারে। এ দর গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

হঠাৎ এলএনজির দামে এই উত্থানের কারণ চীন। দেশটি বায়ুদূষণ কমাতে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে গ্যাসের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এতে চীনে এলএনজি আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, যা এশিয়ার বাজারে দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতিও দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
এলএনজির এই মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার। কারণ, নতুন বছরে বাংলাদেশও এলএনজির বাজারে ক্রেতা হিসেবে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। সরকার আগামী বছরগুলোতে এলএনজির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ করার চিন্তা করছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, এলএনজির প্রথম চালানটি আগামী এপ্রিলে দেশে আসবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ ‘চীনের পরিষ্কার বায়ুর মূল্য দিচ্ছে বিশ্ববাসী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, চীন বায়ুদূষণ রোধ করতে গ্যাসের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে কয়লাখনি বন্ধ করে দিচ্ছে। ব্লুমবার্গের খবরে গোল্ডম্যান স্যাকসের জ্বালানি খাতবিষয়ক বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান লিলংয়ের মন্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, চীনের বাড়তি চাহিদার কারণে বিশ্বব্যাপী এলএনজির দাম বাড়ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি করে জাপান। এ তালিকায় শীর্ষ পাঁচের মধ্যে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভারত ও তাইওয়ান। অন্যদিকে রপ্তানির তালিকায় শীর্ষে আছে কাতার, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। বৈশ্বিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চলতি বছর জাপান ৮ কোটি ৩৫ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছে। চীন ৩ কোটি ৮০ লাখ টন এলএনজি আমদানি করে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। কোরিয়ার আমদানি দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ টনে।
এলএনজির দাম সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৪ সালে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ওই বছর এলএনজির (জাপানের আমদানি) প্রতি এমএমবিটিইউর দাম দাঁড়ায় ১৬ ডলারে। ২০১৬ সালে তা ৬ দশমিক ৮৯ ডলারে নেমে আসে। এযাবৎকালে সবচেয়ে কম দাম ছিল ২০১৬ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে, প্রতি এমএমবিটিইউ ৬ দশমিক ৬৮ ডলার। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, গত নভেম্বর মাসে এ দর বেড়ে ৭ দশমিক ৭৫ ডলারে দাঁড়ায়। বিশ্বব্যাংকের ডিসেম্বর মাসের চূড়ান্ত হিসাব আগামী সপ্তাহে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে আগামী বছর দৈনিক গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলার হিসাবে দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা যাবে। আর এলএনজি আমদানি করে মেটানো হবে ১০০ কোটি ঘনফুটের চাহিদা। সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে চায়। ইতিমধ্যে এলএনজি আমদানিকে মাথায় রেখে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এ দাম আরও বাড়ানো হলে পণ্য উৎপাদনে ব্যয় আরও বাড়বে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গ্যাসের দামের চেয়ে এলএনজির দাম তিন-চার গুণ বেশি হবে। বিষয়টি আমরা আগেও বলেছি। গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ভর্তুকি দিয়ে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল রাখা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এলএনজি এলে গ্যাসের দাম কত দাঁড়াবে, তা আমাদের জানানো হয়নি। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি, দাম এখনকার মতোই থাকবে।’
আবুল কাসেম খান মনে করেন, এলএনজি দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়। তাই গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে। বিশেষ করে সমুদ্রে।