ফারমার্স ব্যাংকে নতুন এমডি

সংকটে থাকা বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে নিয়োগ পেয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের সাবেক এমডি এহসান খসরু। বর্তমানে তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত।

নতুন প্রজন্মের এ ব্যাংক এখনো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ব্যাংকটিতে টাকা জমা রাখা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকেরা টাকা না পেয়ে ভিড় জমাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় হাজার কোটি টাকা আমানত ফেরত চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে।

আর ব্যাংকটির কর্মকর্তারা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে গ্রাহকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। পাশাপাশি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুদ, উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্তসহ অন্যরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নতুন মূলধন সংগ্রহে। তাঁরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

যোগাযোগ করা হলে এহসান খসরু গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরই ফারমার্স ব্যাংকে যোগদান করব।’

দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যাংক পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে গত ১৯ ডিসেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এ ছাড়া ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদ ছাড়তে হয়।

গত ২ ডিসেম্বর ব্যাংকটি নতুন এমডি এহসান খসরুকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৩ বছরের জন্য তাঁর নিয়োগ অনুমোদন হয়েছে। এ পদে প্রতি মাসে তাঁকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা বেতন অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি তাঁকে প্রতি মাসে ৯ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

সূত্র জানায়, তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকটি থেকে পাওনা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। ফলে গ্রাহকেরা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায়। আর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা টাকা ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করছেন। টাকা ফেরত চাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের ৫০৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) ১৫ কোটি টাকা, বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে।

জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন নয়টি ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। অনুমোদন পাওয়ার আগেই সাইনবোর্ড লাগিয়ে দপ্তর খুলে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছিল ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর বছর না ঘুরতেই ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। তারল্য-সংকটের কারণে গ্রাহকেরা চেক দিয়েও ব্যাংকটি থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

মূলধন-সংকট কাটানোর জন্য ব্যাংকটিকে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংকটে পড়া ব্যাংকটি এ বন্ড বিক্রি করতে পারলে মূলধন বাড়বে। সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এই বন্ড বিক্রি করতে পারবে ফারমার্স।