গ্রামীণ ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের রেকর্ড

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ সালেই সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। এ বছর ব্যাংকটি ৩১০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের ২৬৬ কোটি টাকার চেয়ে ৪৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। গ্রামীণ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গত বছরের আর্থিক সূচকের চিত্র তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রতন কুমার নাগ। তিনি ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ব্যাংকটিতে এ দায়িত্ব পালন করছেন।

গ্রামীণ ব্যাংক সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিনিয়োগ ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকার ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটিতে ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে তাঁরা এ পর্যন্ত ১৮৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন।

গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। তার আগে মুনাফা বেশি না হওয়ায় লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব হতো না বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত এমডি। গ্রামীণ ব্যাংক সর্বশেষ ২০১৭ সালে লভ্যাংশ হিসেবে সরকারকে ৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের ১৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা দিয়েছে বলেও জানান রতন কুমার নাগ।

গ্রামীণ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং ১০ লাখ নতুন সদস্য নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটি ২০১৬ সালে ঋণ দিয়েছিল ১৮ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ।

সূত্রমতে, পরিচালন মুনাফা অর্জনে রেকর্ড হলেও সব খরচ বাদ দেওয়ার পর তা কিছুটা কমবে। যেমন ২০১৬ সালে পরিচালন মুনাফা ২৬৬ কোটি টাকা হলেও খরচের পর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছিল ১৩৯ কোটি টাকা।

বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের ৯০ লাখ সদস্য রয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীর সংখ্যা ২১ হাজার। কর্মচারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনকাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। রতন কুমার নাগ জানান, সরকারি বেতনকাঠামো অনুসরণ করেই তৈরি করা হয় গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনকাঠামো।

গ্রামীণ ব্যাংকে পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ নেই ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে। লম্বা সময়ের জন্য পূর্ণ দায়িত্বে কোনো এমডি পায়নি ব্যাংকটি। ২০১১ সালের ১১ মে এই ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরে দাঁড়ান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকেই ব্যাংকটি ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে।

এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যানসহ তিন পরিচালক দিয়েই চলছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ সদস্যের পর্ষদের বাকি ৯ জন ঋণগ্রহীতা সদস্য।

গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা সংশোধনের একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা (ভেটিং) করছে। খসড়াটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত এলেই জারি করা হবে নতুন প্রজ্ঞাপন।

নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিচালক নির্বাচন আয়োজনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংকের একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। আর দুই নির্বাচন কমিশনার হবেন গ্রামীণ ব্যাংকেরই দুজন মহাব্যবস্থাপক। মহাব্যবস্থাপকদের বেছে নেবেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।

প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পরে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের চেষ্টা করেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক যখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ওই পদ্ধতির নির্বাচন থেকে সরে আসার আবেদন জানান, তখনই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নির্বাচনের বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।