ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্টেছে সূচক

>
• বড় পতন ঠেকাতে সূচক টেনে তোলার চেষ্টা চোখে পড়ার মতো।
• দিন শেষে খুব বেশি সফলতা আসেনি।
• লেনদেন বেড়েছে উভয় বাজারে।
• লেনদেন বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি।

শেয়ারবাজারে বড় ধসের পর গতকাল সোমবার সূচক টেনে তোলার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তাই এদিনও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১৯ পয়েন্ট কমেছে। এদিন ঘণ্টায় ঘণ্টায় সূচকটির রূপ পাল্টেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি এদিন ৮৯ পয়েন্ট কমেছে। সূচক কমলেও উভয় বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। 

সপ্তাহের শুরুতে গত রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৩ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ২ শতাংশ কমেছে। আর সিএসইর সার্বিক সূচকটি কমেছিল ৪০৫ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ২ শতাংশ। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ পতন ছিল সর্বোচ্চ। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বাজার-সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববারের বড় পতনের পর সোমবারও লেনদেন শুরু হয় বড় ধরনের পতন দিয়ে। লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইএক্স সূচকটি ১১৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তখনই বড় পতন ঠেকাতে টেনে তোলা হয় সূচক। তাতে ২০ মিনিটে সূচকটির ৮২ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার করা হয়। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায়নি। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে গিয়ে পুনরুদ্ধার হওয়া ৮২ পয়েন্টের মধ্যে ৬৫ পয়েন্ট আবার খোয়া যায়। এভাবে গতকাল দিনভর চলে সূচকের ওঠা-নামা। বড় পতন দেখা দিলেই বারবার টেনে তোলা হয় এটিকে। দিন শেষে গিয়ে যদিও আগের দিনের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট সূচক কমে লেনদেন শেষ হয়।

২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর গত অর্ধযুগে নেওয়া নানামুখী সংস্কারের পরও বড় কোনো কারণ ছাড়া বাজারের এ রকম ধস দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার-সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এমন পতনের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকার হাউসের মালিক ও শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, এত সংস্কার, এত আইন-কানুনের পরও ভালো-মন্দ নির্বিচারে যেভাবে শেয়ারের দাম কমছে এবং ধস নামছে, সেটি খুবই অপ্রত্যাশিত।

তবে পতনের জন্য যেসব কারণকে সামনে আনা হয়েছে সেগুলোর সুনির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই। অনেকের মতে, ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে একটি মহল বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে। তবে বাজারে অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাজারে সূচক বেড়েছে।

ব্যাংকের মালিকানাধীন এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাজারের মূল সমস্যা আস্থার। তাই সামান্যতেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। এ কারণে মুদ্রানীতিই হোক বা রাজনৈতিক আশঙ্কা, ভীত হয়ে পড়েন অনেক বিনিয়োগকারী। তাঁর মতে, বাজারে অর্থের সংকট খুব বেশি নেই। মূল সংকট আস্থার। ভালো কোম্পানির অভাবও এ আস্থা সংকটের বড় কারণ বলে তাঁর মত। তিনি বলেন, ‘ভালো কোম্পানির শেয়ার সহজে কেউ বিক্রি করতে চাই না। যেহেতু আমাদের বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম, তাই অল্পতেই বিনিয়োগকারীরা হাতের শেয়ার বিক্রি করে দেন।’

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘পতনের জন্য অনেকে মুদ্রানীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। আমরা সেগুলোর সঙ্গে একমত নই। আমার মনে হয়, এগুলোকে পুঁজি করে একটি মহল দাম কমাচ্ছে, যাতে কম দামে তারা শেয়ার কিনতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদারকি জোরদার করা। কারা বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি করছে, বিক্রির পেছনে কোনো গুজব রয়েছে কি না, এসব বিষয় ভালোভাবে খতিয়ে দেখা।’ 

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘এ পতনের আগে আমরা দেখলাম বাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব দ্রুত হারে বাড়ছে। তখন এর কারণ খুঁজে দেখা দরকার ছিল। যখন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বাজারে দাম খুব দ্রুত বাড়তে থাকে, তখন পতনটাও দ্রুত হয়। আমাদের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা সমস্যা সব সময় দেখা যায়, দাম বাড়তে থাকলে তাঁরা শেয়ার বিক্রি করেন না। মনে করেন দাম খালি বাড়তে থাকবে। আবার দাম কমতে শুরু করলে সবাই একসঙ্গে বিক্রি শুরু করেন।’

মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল খাতভিত্তিক লেনদেনে দরপতনে শীর্ষে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। এ খাতের লেনদেন হওয়া প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দাম গড়ে দেড় শতাংশ করে কমেছে। এর পরের অবস্থানেই ছিল ব্যাংক খাত। এ খাতের প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দাম গতকাল গড়ে ১ শতাংশ করে কমেছে।