ঋণের টাকা ম খা আলমগীর ও চিশতীর হিসাবে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ব্যাংকটির সাবেক দুই শীর্ষ ব্যক্তির অনিয়ম।

ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকের ঋণের ভাগ নিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। এর মাধ্যমে দুজনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তাঁরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ব্যাংকটির জনবল নিয়োগ হয়েছে মূলত এ দুজনের সুপারিশেই। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাঁরা নিয়োগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরসিএল প্লাস্টিকের সঙ্গে ব্যাংকের গ্রাহকদের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। প্রতিবেদনটি ফারমার্স ব্যাংকে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যোগাযোগ করা হলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব তথ্য পুরো অসত্য ও অবিশ্বাস্য। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে কী এভাবে টাকা নিতে পারি। এর সত্যতা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংক তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারত। আবার যদি কেউ আমার নাম ব্যবহার করে থাকে, তার দায়ভার কি আমি নেব।’ মহীউদ্দীন খান আলমগীর দাবি করেন, তাঁর চার বছরে ব্যাংক ভালো চলেছে। এ সময়ে মুনাফাও হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে মাহবুবুল হক চিশতীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল তনুজ করপোরেশন ঋণের জন্য ফারমার্স ব্যাংকে আবেদন করে। কিন্তু ঋণ আবেদনটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ওই দিনই তনুজ করপোরেশনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৫০ লাখ টাকা। পরে কোম্পানিটি সেই টাকা তাদেরই অন্য এক হিসাবে স্থানান্তর করে। অর্থাৎ ঋণ অনুমোদনের আগেই গ্রাহককে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়, যার সঙ্গে
জড়িত ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তনুজ করপোরেশনের ব্যাংক হিসাব থেকে গত বছরের ১৯ জুলাই ১ কোটি ২২ লাখ টাকা ফারমার্স ব্যাংকে খোলা তাদেরই অন্য এক ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ ১ কোটি ২২ লাখ টাকার মধ্যে ওই দিন ৪২ লাখ টাকা নগদে তোলা হয়। আর ৮০ লাখ টাকার একটি পে-অর্ডার ইস্যু করে তনুজ করপোরেশন। যদিও পরে পে-অর্ডারটি বাতিল করা হয়। পরে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নামে ১৮ লাখ ও মাহবুবুল হক চিশতীর নামে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। অবশিষ্ট ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে মখা আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী অর্থ গ্রহণ করায় তাঁদের নৈতিক স্খলন ঘটেছে। এদিকে জাহান ট্রেডার্স নামে অপর একটি ঋণ হিসাব থেকে গত বছরের ১৯ মার্চ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা কোম্পানিটিরই আরেকটি হিসাবে পাঠানো হয়। ওই ঋণও দেওয়া হয় মহীউদ্দীন খান আলমগীরের একক সুপারিশে। তনুজ করপোরেশন ও জাহান ট্রেডার্স উভয় কোম্পানিই নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেও পুরো টাকা তুলেছেন নগদে। এর ফলে ঋণের টাকা প্রকৃত খাতে ব্যবহার হয়নি। ২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকটিতে নগদ অর্থের চরম সংকট দেখা দেয়।
সংকটে পড়ে ব্যাংকটি গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় গত নভেম্বরে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। পরিচালকের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তাঁরা। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।