চাওয়ার চেয়ে বেশি পাচ্ছেন দরজিশ্রমিকেরা

চট্টগ্রামে জিইসির মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজার একটি দরজির দোকানে পোশাকের মাপ দিচ্ছেন এক নারী । প্রথম আলো ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে জিইসির মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজার একটি দরজির দোকানে পোশাকের মাপ দিচ্ছেন এক নারী । প্রথম আলো ফাইল ছবি
  • পোশাক তৈরির ফোঁড়নভিত্তিক বা পিস রেটে মজুরি নির্ধারণ।
  • সরকার-নির্ধারিত মজুরি সম্পর্কে জানেন না দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ দরজিশ্রমিক।

দরজির দোকানের কারিগর বা শ্রমিকেরা একটি প্যান্ট সেলাইয়ে মজুরি পাবেন ১৬৫ টাকা। এ ছাড়া কোটে ৬০০, সেরওয়ানিতে ৭০০, সাফারিতে ৩০০, বোরকায় ২০০, পাঞ্জাবিতে ১২০, পায়জামায় ৮০, ব্লাউজে ৫০, সালোয়ারে ৭০, স্কুল ড্রেসে ২০০ এবং থ্রিপিসে ১৬০ টাকা মজুরি পাবেন তাঁরা।

নিম্নতম মজুরি বোর্ড দরজিশ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরির এই ফোঁড়নভিত্তিক বা পিস রেট মজুরির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। একই সঙ্গে খসড়ায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দরজিশ্রমিকদের জন্য মাসিক সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৮৫০ টাকা মজুরি চূড়ান্ত করেছে বোর্ড। বিভাগীয় শহরের জন্য নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে দরজিশ্রমিকদের নিম্নতম মাসিক মজুরি ২ হাজার ৩২৫ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন দেড় হাজার টাকা। অবশ্য এবারের বোর্ডে ৪ হাজার ৬৫০ টাকা মজুরি চেয়েছিল শ্রমিকপক্ষ। সেই হিসাবে চাওয়ার চেয়েও বেশি মজুরি পাচ্ছেন এই খাতের শ্রমিকেরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মজুরি বোর্ডের শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ও ঢাকা মহানগর দরজিশ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি মো. আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের মজুরি বোর্ডে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ মজুরি দাবি করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তার চেয়েও বেশি মজুরি পাওয়া গেছে। তবে সারা দেশের ৯৫ শতাংশ দরজি জানেন না তাঁদের জন্য একটি নিম্নতম মজুরিকাঠামো আছে। এ বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করতে হবে।’

খসড়া মজুরিকাঠামোটি গত ২৯ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। তাতে সুপারিশের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা ১৪ দিনের মধ্যে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। দরজিশ্রমিকদের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। এতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন আবুল কালাম আজাদ।

মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, দরজি কারখানার সর্বনিম্ন বা পঞ্চম গ্রেডের শ্রমিকদের মজুরি জেলা ও উপজেলা শহরে ৪ হাজার ৮৫০ টাকা এবং বিভাগীয় শহরে ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে মাসিক মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা। চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা যথাক্রমে ৫০০ ও ৩০০ টাকা। পঞ্চম গ্রেডে বাড়িভাড়া জেলা ও উপজেলায় ১ হাজার ৫০ ও বিভাগীয় শহরে ১ হাজার ২০০ টাকা। পঞ্চম গ্রেডের মধ্যে জেন্টস ও লেডিস কাজের হেলপার, রেডিমেড পোশাকের হেলপার, টি-বয় ও অন্যান্য কাজের হেলপার অন্তর্ভুক্ত আছেন। সব গ্রেডের শ্রমিকের জন্য চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতার একই হার সুপারিশ করা হয়েছে।

চতুর্থ গ্রেডে (আধা দক্ষ) আছে ফিউজিং, ওভারলক ও আইলেট অপারেটর, সাধারণ সেলাই কারিগর ও নিরাপত্তাকর্মী। এই গ্রেডের শ্রমিকদের মজুরি জেলা ও উপজেলা শহরে ৫ হাজার ৬৬০ টাকা এবং বিভাগীয় শহরে ৫ হাজার ৮৪০ টাকা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাসিক মূল মজুরি ৩ হাজার ৬০০ টাকা। বাড়িভাড়া জেলা ও উপজেলায় ১ হাজার ২৬০ এবং বিভাগীয় শহরে ১ হাজার ৪৪০ টাকা।

তৃতীয় গ্রেডের (দক্ষ) শ্রমিকদের মজুরি জেলা ও উপজেলা শহরে ১১ হাজার ৮৭০ টাকা এবং বিভাগীয় শহরে ১২ হাজার ২৮০ টাকা। এর মধ্যে মাসিক মূল মজুরি ৮ হাজার ২০০ টাকা। বাড়িভাড়া জেলা ও উপজেলায় ২ হাজার ৮৭০ এবং বিভাগীয় শহরে ৩ হাজার ২৮০ টাকা। এই গ্রেডে আছেন শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা, স্কুল ড্রেস, ব্লাউজ, ফ্রক, কামিজ, সালোয়ার, থ্রিপিস সেলাইয়ের কারিগর।

দ্বিতীয় গ্রেডে (উচ্চতর দক্ষ) আছেন হিসাবরক্ষক, বিক্রয়কর্মী, স্টোরম্যান, পুরুষদের কোট, প্যান্ট, সেরওয়ানি, সাফারি, ডাক্তারি অ্যাপ্রোন এবং নারীদের বোরকা, অ্যাপ্রোন, কোট, প্যান্ট, ম্যাক্সি সেলাইয়ের কারিগর। এই গ্রেডের শ্রমিকদের মজুরি জেলা ও উপজেলা শহরে ১২ হাজার ৪১০ টাকা এবং বিভাগীয় শহরে ১২ হাজার ৮৪০ টাকা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাসিক মূল মজুরি ৮ হাজার ৬০০ টাকা। বাড়িভাড়া জেলা ও উপজেলায় ৩ হাজার ১০ এবং বিভাগীয় শহরে ৩ হাজার ৪৪০ টাকা।

প্রথম গ্রেডের পুরুষ ও নারীদের পোশাকের কাটিংমাস্টারদের মজুরি জেলা ও উপজেলা শহরে ১৩ হাজার ২২০ টাকা এবং বিভাগীয় শহরে ১৩ হাজার ৬৮০ টাকা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাসিক মূল মজুরি ৯ হাজার ২০০ টাকা। বাড়িভাড়া জেলা ও উপজেলায় ৩ হাজার ২২০ এবং বিভাগীয় শহরে ৩ হাজার ৬৮০ টাকা। এ ছাড়া শিক্ষানবিশ শ্রমিকদের মজুরি ৩ হাজার টাকা সুপারিশ করেছে মজুরি বোর্ড। শিক্ষানবিশকাল হবে ছয় মাস। আর সব গ্রেডের শ্রমিকের মূল মজুরি বছরে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

সারা দেশে দরজিশ্রমিকের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ১ লাখের বেশি দরজিশ্রমিক আছেন বলে দাবি করেন আইয়ুব আলী। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ দরজিশ্রমিক বোর্ডের নির্ধারিত মজুরির চেয়ে কম পান। ফলে নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়নে জোর
দিতে হবে।’