৪৫ বছরের অর্জন এক হাজার টাকার পুঁজি

নিজাম উদ্দিন
নিজাম উদ্দিন
>
  • ১৯৭৩ সালে নিজাম উদ্দিন শুরু করেন এই ওষুধ বিক্রির ব্যবসা।
  • একটা সময় দিনে চার-পাঁচ টাকা আয় হতো।
  • এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০০-৩০০ টাকা।

এভাবেই ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করে ৪৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব নিজাম। বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার অচিন্ত্যপুর গ্রামে।

ছোটবেলাতেই এই পেশা বেছে নিয়েছিলেন নিজাম উদ্দিন। মাত্র ২০ টাকার পুঁজি নিয়ে। এখন দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করেন। ব্যবসায় পুঁজি এক হাজার টাকা। নিজামের ভাষায় এটাই ‘অনেক’। বললেন, ‘মাত্র ২০ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন আমার এই ব্যবসায় অনেক টাকা হয়েছে। বর্তমান পুঁজি এক হাজার টাকা!’ অথচ ‘অনেক’ শব্দটাকে লম্বা টানে উচ্চারণ করলেন।

নিজাম উদ্দিনের বাবা মৃত তোরাফ আলী বিশ্বাস ছিলেন হতদরিদ্র। ফলে নিজামের পড়ালেখা বেশি দূর এগোয়নি। শৈলকুপা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পাঠ না চুকাতেই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়। সেটা ১৯৭৩ সালের কথা। পুঁজি সেই ২০ টাকা। কিছুটা বাবার দেওয়া, কিছুটা ধার করে পাওয়া। তাই নিয়ে ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি শুরু।

এই পেশা বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন নিজাম। বললেন, তখন মাঠগুলো বছরের বেশির ভাগ সময়ই শুকিয়ে থাকত। ফসলের খেতে ইঁদুরের উৎপাত ছিল বেশি। আবার মানুষের গোলাভরা ধান আর উঠানভরা শস্য থাকত। সবই নষ্ট করে দিত এই প্রাণী। এ কারণে ইঁদুর মারার ওষুধের কদর ছিল।

সত্তরের দশকে হেঁটে শহরে বা গ্রামগঞ্জে ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করতেন নিজাম উদ্দিন। ২০১৮ সালে এসেও তা-ই। গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ওষুধ বিক্রি করছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।

আলাপচারিতায় উঠে এল নিজাম উদ্দিনের ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিক্রি ও জীবন-সংসারের কঠিন সব গল্প। তিনি বাজার থেকে কীটনাশক কিনে আনেন। বাড়িতে বসে সেটা খাবারের সঙ্গে মেশান। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় ইঁদুর মারার ওষুধ। মাসে কমবেশি ২০ দিন তা বিক্রির উদ্দেশ্যে বের হন। এখন কেবল শৈলকুপা, ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ শহরে বিক্রি করেন। বাহন বলতে তাঁর দুই পা।

নিজাম উদ্দিন বলেন, একটা সময় দিনে চার-পাঁচ টাকা আয় হতো। এখন হয় ২০০-৩০০ টাকা। এটা দিয়েই সংসার চলে। ব্যবসার এক হাজার টাকা পুঁজি ছাড়া কোনো সঞ্চয় নেই। বাড়ি, জঙ্গল আর চাষযোগ্য মিলিয়ে তাঁর দুই বিঘা জমি আছে। টিনের ছাউনির মাটির বাড়ি। ইচ্ছা ছিল বাড়িটা পাকা করবেন। সেটা করাও সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

নিজাম উদ্দিনের পাঁচ সন্তান। বড় ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মেজ ছেলে আছেন কৃষিকাজ নিয়ে। ছোট ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আর ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।

নিজাম উদ্দিন জোর দিয়ে বললেন, তাঁর তৈরি ওষুধ কিনে ৯০ শতাংশ মানুষ ইঁদুর নিধনে সফল হয়েছেন। মাঝেমধ্যে দু-চারজন বলেছেন কাজ হয়নি। তখনই তিনি বিনা পয়সায় তাঁকে আবার ওষুধ দিয়েছেন।