নির্বাচনের বছরও মুনাফা বাড়বে

>
সূত্র: জেট্রোর জরিপ
সূত্র: জেট্রোর জরিপ

• জেট্রোর জরিপ
• চলতি বছর এ দেশে তাদের মুনাফা বাড়বে।
• এ ক্ষেত্রে এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।

নির্বাচনের বছরও বাংলাদেশে পরিচালন মুনাফা বাড়বে বলে মনে করে বেশির ভাগ জাপানি প্রতিষ্ঠান। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে বলা হয়েছে, এ দেশে কর্মরত ৬৮ শতাংশ জাপানি কোম্পানি মনে করে যে ২০১৭ সালের চেয়ে চলতি বছরে তাদের মুনাফা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এ ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বিভিন্ন দেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানিগুলোর ওপর প্রতিবছরই এ ধরনের জরিপ করে জেট্রো। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৯টি দেশের ওপর করা এবারের জরিপটি গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়। এর তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত ১০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এই জরিপে বিভিন্ন দেশে জাপানের ৪ হাজার ৬৩০টি কোম্পানির মতামত নেওয়া হয়েছে। জেট্রোর এ জরিপে বিশ্ব ও বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করা যায়।
বাংলাদেশ নিয়ে জাপানিদের ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) মহাসচিব তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে যেসব জাপানি প্রতিষ্ঠান আছে, তারা প্রায় সবাই ব্যবসা বাড়াচ্ছে। মুনাফার আশা না থাকলে সম্প্রসারণে যাওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, এ বছর নির্বাচন হলেও জাপানি কোম্পানিগুলো হয়তো আশা করছে হরতাল-অবরোধ হবে না। কিন্তু সেটা হলে অবস্থা খারাপ হবে।
জরিপে অংশ নেওয়া এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৪০ শতাংশের বেশি কোম্পানি বলেছে, এবার তাদের মুনাফা বাড়বে। অন্যদিকে মুনাফা কমবে এমন আশঙ্কা করেছে প্রায় ১০ শতাংশ কোম্পানি। ব্যবসায়ে আস্থার দিক দিয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া ভালো অবস্থানে আছে। এ অঞ্চলের অধিকসংখ্যক কোম্পানি বলছে, তারা আগামী দু-এক বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে।
জেট্রোর হিসাবে, বাংলাদেশে এখন ২৪৫টি জাপানি কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ কোম্পানি টেলিযোগাযোগ, ১৪ শতাংশ সার, ১২ শতাংশ তৈরি পোশাক, ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৪ শতাংশ রাসায়নিক, ৩ শতাংশ চামড়া খাত এবং বাকিরা অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছে। এ দেশের ৪১টি কোম্পানি জরিপে অংশ নেয়।
জেট্রোর আগের জরিপে প্রায় ৪৯ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছিল, ২০১৭ সালে তাদের পরিচালন মুনাফা ২০১৬ সালের তুলনায় বাড়বে। এবারের জরিপে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো কোম্পানির হার ৬৮ শতাংশে উন্নীত হয়। অন্যদিকে প্রায় ২৯ শতাংশ কোম্পানি বলেছে, তাদের মুনাফা পরিস্থিতি আগের মতোই থাকবে। কমে যাবে বলে আশঙ্কা করেছে মাত্র ৩ শতাংশ কোম্পানি।
মুনাফা বাড়বে, এমন পূর্বাভাস দেওয়া কোম্পানির হারের দিক দিয়ে ১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথমে আছে পাকিস্তান। এর মানে হলো, পাকিস্তানে কর্মরত জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মনে করে, সে দেশে মুনাফা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এ তালিকায় বাংলাদেশের পরে আছে ভারত, লাওস, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ অন্যান্য এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ।
জানতে চাইলে জাপানের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা বাংলাদেশের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান জরিপের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তাহলে আমরা চলতি বছর আরও ভালো ব্যবসার আশা করছি। দেশের মানুষের আয় বাড়ছে। সম্প্রতি প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ভালো দেখা যাচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে।’

সম্প্রসারণে শীর্ষ পাঁচে বাংলাদেশ
জেট্রোর জরিপে জাপানি কোম্পানিগুলোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আগামী ১-২ বছরে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে যাবে কি না। এর জবাবে ইতিবাচক উত্তর দিয়েছে ৬৯ শতাংশ জাপানি কোম্পানি। একই থাকবে বলে জানিয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারত ও ভিয়েতনাম বাংলাদেশের ওপরে আছে।
জরিপে ২০১৮ সালে স্থানীয় কর্মীর সংখ্যা বাড়বে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে কর্মরত ৬৮ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, তারা এ বছর নতুন কর্মী নিয়োগ করবে। ২৯ শতাংশ কোম্পানি বলেছে, তারা কর্মীর সংখ্যা একই রাখবে। অন্যদিকে ৩ শতাংশ বলেছে তারা কর্মী ছাঁটাই করবে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এ অঞ্চলের ১৯টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের ওপরে আছে পাকিস্তান।

বড় পাঁচ সমস্যা
বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বড় পাঁচটি সমস্যা কী-এ প্রশ্নের জবাবে জাপানি কোম্পানিগুলো কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়ার সমস্যাকে এক নম্বরে রেখেছে। এরপর রয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামোর ঘাটতি, কর্মীর মান, পণ্যের মান রক্ষা এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং ও ঘাটতি।
প্রতিবেশী ভারতের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো হলো মজুরি বৃদ্ধি, বাজারে প্রতিযোগীদের হিস্যা বৃদ্ধি, কর্মীর মান, উচ্চ করহার ও পণ্যের মান রক্ষা। পাকিস্তানে বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে মান রক্ষা, কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ কেনা, মুদ্রার বিনিময় হারে ওঠানামা, উচ্চ আমদানি শুল্ক ও কাস্টমসে সময় বেশি লাগা। মিয়ানমারে বড় সমস্যা হলো দেশটিতে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ মেলে না, বিদ্যুৎ ঘাটতি, মান রক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামোয় প্রবল ঘাটতি এবং মজুরি বৃদ্ধি।