সরকারি তহবিলের অর্ধেক অর্থ যাবে বেসরকারি ব্যাংকে

আবুল মাল আবদুল মুহিত
আবুল মাল আবদুল মুহিত
>
  • অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের সঙ্গে বসবে ব্যাংকগুলো
  • সরকারি তহবিলের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যায়
  • সরকারি তহবিলের ৫০ শতাংশ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে

ব্যাংকের অর্থসংকট মেটাতে সরকারি তহবিলের ৫০ শতাংশ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের চাপে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল রাতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। বিদ্যমান নিয়মে সরকারি তহবিলের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যায়।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সরকারের আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। গুলশানের জব্বার টাওয়ারে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার রাত নয়টায় এ সভা শেষ হয়। ব্যাংকের আর্থিক সংকট, ঋণের সুদহার বৃদ্ধি ও ডলার-সংকটের প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

গতকালের বৈঠকে অর্থসংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) ৩ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠনটি। এর মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এতে অর্থসংকট মেটার পাশাপাশি সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসবে বলে সভায় জানানো হয়। এ জন্য আগামীকাল রোববার সোনারগাঁও হোটেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সভা অনুষ্ঠিত হবে। অর্থমন্ত্রী নিজেও এ সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে ব্যাংক খাতের সংকট মেটাতে আর্থিক খাতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের ঘটনা এটাই প্রথম।

বিএবি গতকাল বৈঠকে সংকট কাটাতে নয়টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আছে কৃষি খাতে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের সীমা কমানো, আমানত বাড়াতে নানা ধরনের পেনশন স্কিমে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও কর কমানো বা পুরোপুরি প্রত্যাহার, খাদ্যশস্য আমদানি অর্থায়নে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি, ইত্যাদি। বিএবি মনে করে, এর ফলে বিদ্যমান সংকট দূর হবে।

 সভা সূত্র জানায়, ব্যাংকের একাধিক চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনী বছরে আর্থিক খাতে সংকট হলে সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়টি বুঝছে না। এ জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংক পরিচালনা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংকে দুর্ঘটনার পর কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। ফলে পুরো খাতে সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন। উপস্থিত বেশির ভাগ আলোচকই অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ব্যাংক থেকে যেন সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান টাকা সরিয়ে না ফেলে, এটি নিশ্চিত করতে হবে। সভায় অর্থমন্ত্রী সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য বিষয়ে তেমন কথা বলেননি।

 সভা শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে বাজারে অনেক কথাবার্তা আছে। এ জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হলো, পরশু (রোববার) আরও হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকই ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক, আমি না। গভর্নরের উপস্থিতিতেই নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কার হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই না, এ বছরে কোনোভাবে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হোক। যেভাবে চলছে, এভাবেই চলতে থাকুক। এবার সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। নতুন বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।’

সভা শেষে বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থনীতিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৭০ শতাংশ অবদান রাখছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের বাইরে অন্যায়ভাবে বেশি টাকা বিনিয়োগ করেছি। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। শিল্প উন্নয়নের কারণে মানুষের টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। আমরা বলেছি ১৪-১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন অর্ধেক টাকা বেসরকারি ব্যাংকে যাবে।’

নজরুল ইসলাম মজুমদার আরও বলেন, ‘সিআরআরে অলসভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা পড়ে আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত ১০ বছরে এ টাকা কোনো ভূমিকা রাখেনি। এ জন্য আমরা ৩ শতাংশ টাকা ছেড়ে দিতে বলেছি। তাহলেই অর্থসংকট কেটে যাবে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের মধ্যে চলে আসব। তাহলেই তিন মাসের মধ্যে সুদহার এক অঙ্কে চলে আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বলেছেন।’

বিশেষ এই সভায় অর্থমন্ত্রীর ডানে বসা ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবাল ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। অর্থমন্ত্রীর বাঁয়ে বসা ছিলেন বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

অনুষ্ঠানে ৩৮টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রায় ২৫টি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম উপস্থিত ছিলেন।