সেবার নির্ধারিত মান নিশ্চিত করতে না পারলে জরিমানা

>
  • মোবাইল ফোন সেবা
  • সেবার মান বাড়াতে জরিমানা ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা

বিভিন্ন সূচকে টেলিযোগাযোগ সেবার নির্ধারিত মান নিশ্চিত করতে না পারলে এখন থেকে আর্থিক জরিমানা দিতে হবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের। একেকটি সেবার মানের জন্য জরিমানার এ পরিমাণ সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা। একই ধরনের সূচকে মানের গাফিলতি দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে জরিমানার পরিমাণ হবে দ্বিগুণ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, সেবার মান নিশ্চিত করতে আর্থিক জরিমানা আরোপের বিষয়টি টেলিযোগাযোগ আইনে উল্লেখ থাকলেও তা কীভাবে আদায় করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। এ জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নামের একটি নীতিমালা তৈরি করেছে কমিশন। এতে টেলিযোগাযোগ সেবার বিভিন্ন সূচকের সন্তোষজনক মান কী হওয়া উচিত, সেটি স্পষ্ট করা হয়েছে। বিটিআরসির একটি কারিগরি পর্যবেক্ষণ দল অপারেটরদের জরিমানা করার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এ দলটি কিউওএস নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবে।

জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, অপারেটরদের আর্থিক জরিমানা করাই এ ধরনের নীতিমালার উদ্দেশ্য নয়। বিটিআরসি চায় মানুষ যাতে উন্নত মানের টেলিযোগাযোগ-সেবা পায়। সেটি নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দেশে টেলিযোগাযোগ-সেবার নিম্ন মান নিয়ে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও সেবার মান নিয়ে সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ধরনের জরিমানা আরোপ করার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস (এসএস) বিভাগ সর্বশেষ কমিশন সভায় মোবাইল ফোন অপারেটরসহ সব ধরনের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের জরিমানা আরোপের প্রস্তাব দেয়।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক জরিমানা আরোপের বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগির পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই জরিমানা আরোপের বিষয়ে কাজ শুরু করবে বিটিআরসির তদারকি দল।

বিটিআরসির কিউওএস নীতিমালা অনুযায়ী, চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি হতে হবে ৭ এমবিপিএস (মেগা বিটস প্রতি সেকেন্ড)। একইভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) জন্য ইন্টারনেটে একটি ওয়েবপেজ ডাউনলোড হওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৭ সেকেন্ড। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে এ সময়ের মধ্যে ওয়েবপেজ চলে আসতে হবে। কথা বলার সময় কল কেটে যাওয়া বা কল ড্রপের হার হতে হবে ২ শতাংশের কম। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি দিনে ১০০টি ফোন করলে তার সর্বোচ্চ কল ড্রপ ২ টির বেশি হওয়া যাবে না। এর বেশি হলে এ জন্য সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে জরিমানা করতে পারবে বিটিআরসি।

বিটিআরসির কিউওএস নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) ইন্টারনেটে ডাউনলোডের ন্যূনতম গতি হতে হবে ১৬০ কেবিপিএস (কিলো বিটস প্রতি সেকেন্ড) এবং তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) ইন্টারনেটের গতি হতে হবে কমপক্ষে ২ এমবিপিএস। টুজি ও থ্রিজি ইন্টারনেটের আপলোডের গতি হতে হবে কমপক্ষে ৪০ ও ১২৮ কেবিপিএস।

শুধু মোবাইল ফোন অপারেটর নয়, আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স, ল্যান্ডফোনের মতো অন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিটিআরসির কিউওএসের নির্ধারিত মান নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে তাদেরও এ ধরনের জরিমানার মুখে পড়তে হবে। সেবার মানসংক্রান্ত এসব সূচক সব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে খারাপ মানের সেবার জন্য অপারেটরদের জরিমানা করতে পারে। কিন্তু সেবার মানের ত্রুটি নির্ধারণের বিষয়টি যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এভাবে আর্থিক জরিমানা আদায়ের নিয়ম থাকা উচিত নয়। কারণ, একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যদি খারাপ হয় এবং সেটি যদি বিটিআরসি গ্রাহকদের জানিয়ে দেয়, সেটিই যথেষ্ট। এটা করা হলেই অপারেটররা সেবার মান বাড়াতে আরও মনোযোগী হবে।