মোবাইল ফোনের দুটি কারখানা করবে সিম্ফনি

জাকারিয়া শহীদ
জাকারিয়া শহীদ
>

দেশের মোবাইল ফোনের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে সিম্ফনি। এ বছর ঢাকার আশুলিয়ায় ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কে দুটি কারখানা করার পরিকল্পনা আছে সিম্ফনির। সিম্ফনির উত্থান, পথচলা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন  ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম

প্রথম আলো: সিম্ফনির ব্যবসা এখন কেমন চলছে?

জাকারিয়া শহীদ: ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করে আমরা শুরু করেছিলাম, তা শতভাগ অর্জন করেছি। এ হিসাবে শুরুটা খুবই ভালো হয়েছে, এখন সামনের দুটি প্রান্তিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে ভালো করার জন্য আমাদের প্রস্তুতিও যথেষ্ট রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের সামগ্রিক লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।

প্রথম আলো: কিন্তু গত বছর থেকে শোনা যাচ্ছে, সিম্ফনি তার শীর্ষস্থান ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এটা কতটুকু সত্য?

জাকারিয়া শহীদ: মোবাইল ফোনের বাজারে বিভিন্ন স্তর আছে। ১০ হাজার টাকার বেশি দামের হ্যান্ডসেটের বাজারে এখন গ্রাহকের চাহিদা বাড়ছে। এ বাজারে আন্তর্জাতিক ও চীনা ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ একটু বেশি। আর সিম্ফনি কাজ করে মূলত ৭৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের ফোন নিয়ে। সাধারণ ফোনে সিম্ফনির বাজারের অবস্থান আগের মতোই আছে। মধ্যম পর্যায়ের স্মার্টফোনের বাজারেও সিম্ফনি ভালো করছে। তবে ১০ হাজার টাকার ওপরের বাজারে আমরা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়েছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, আমরা এখন চীন থেকে আমদানি করে এনে মোবাইল ফোন বাজারে বিক্রি করছি। বেশি দামের মোবাইল ফোনের বাজারে স্থান করে নেওয়ার জন্য সিম্ফনি দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। মানুষের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ধরনে এখন পরিবর্তন আসছে। যাঁরা এত দিন কম দামের ফোন ব্যবহার করতেন, তাঁরা কিন্তু ধীরে ধীরে একটু বেশি দামের ফোন ব্যবহার করছেন। গ্রাহকের এই চাহিদা পূরণে সিম্ফনি এ বছর জোর দেবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে ফোরজি চালু হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। এ বাজারে সিম্ফনির অবস্থান কী?

জাকারিয়া শহীদ: ফোরজিতে সিম্ফনির প্রায় ১২টি মডেলের হ্যান্ডসেট আছে। এগুলোর দাম ৮ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। ফোরজি সেবা নেওয়ার জন্য যথেষ্ট হ্যান্ডসেট এখন বাজারে আছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে এখন মোবাইল ফোন অপারেটরদের যথেষ্ট প্রচারণা চালাতে হবে। ফোরজি ব্যবহারের সুবিধাগুলো গ্রাহকের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। থ্রিজির তুলনায় ফোরজিতে যদি দৃশ্যমান কোনো পার্থক্য না থাকে, তাহলে গ্রাহক তা ব্যবহারে আগ্রহী হবেন না। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে গ্রাহকের কাছে ছয় হাজার টাকার মধ্যে ফোরজি ফোন তুলে দিতে সিম্ফনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

প্রথম আলো: সিম্ফনির নিজস্ব মোবাইল ফোন কারখানার অগ্রগতি কোন পর্যায়ে আছে?

জাকারিয়া শহীদ: সিম্ফনি দুটি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর একটি হবে সাভারের আশুলিয়ায়। এটির সব কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেলেই এখানে কাজ শুরু হবে। সেটা আগামী মাস থেকেই হতে পারে। এখানে বছরে তিন থেকে চার লাখ হ্যান্ডসেট সংযোজন করা যাবে। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে দেশেই মোবাইল উৎপাদন ও সংযোজনের জন্য গাজীপুরের হাইটেক পার্কে বড় কারখানা করার জন্য সামিট গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। এই কারখানার কাজ শেষ হতে আরও বছর দু-এক সময় লাগবে।

প্রথম আলো: ওয়ালটন তো ইতিমধ্যেই তাদের কারখানায় মোবাইল সংযোজনের কাজ শুরু করেছে। সিম্ফনির দেরি হচ্ছে কেন?

জাকারিয়া শহীদ: দেশে কারখানা করার জন্য যে সহায়ক নীতিমালা দরকার, সেটি শুরুতে ছিল না। এটি আমাদের দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ। এরপর হঠাৎ করেই কারখানা করার জন্য কর ছাড় দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। তখন থেকে আমরা কারখানার কাজ শুরু করি। আর মোবাইল ফোনের একটি কারখানার কাজ শুরু করে শেষ করতে কমপক্ষে আট মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। এ কারখানা করতে একটু বেশি সময় নিয়েছি, কারণ মানের বিষয়ে আমরা কোনো আপস করতে চাই না। মোবাইল ফোনের কারখানা করা বেশ জটিল, অনেক সূক্ষ্ম ও কারিগরি কাজ করতে হয়। এই কারখানায় কাজ করার জন্য ১০০ লোককে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলো: হাইটেক পার্কের কারখানা নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

জাকারিয়া শহীদ: সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে এখানে মোবাইল উৎপাদনের কারখানা হবে। এ কারখানা থেকে দেশের ভেতরের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও মোবাইল ফোন রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে। এ জন্য হাইটেক পার্ককে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার অবকাঠামোর সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিম্ফনি বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের বিশাল বাজারের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করতে চায়।

প্রথম আলো: সিম্ফনি, ওয়ালটন ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সংযোজনের কারখানা করার আবেদন করেছে। এত কারখানার বাজার কি বাংলাদেশে আছে?

জাকারিয়া শহীদ: বাংলাদেশে অনেক ব্র্যান্ডই চীন থেকে মোবাইল ফোন আমদানি করে বিক্রি করছে। এই বাজারে টিকে থাকতে হলে উচ্চ মানের পণ্য ও সেবার কোনো বিকল্প নেই। এখানে অনেকেই লাইসেন্স নিতে পারে, কিন্তু টিকে থাকতে হবে এই দুটি বিষয় দিয়ে। পণ্যের মান ও সেবা দিয়েই সিম্ফনি বাজারে এত দিন টিকে রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রথম আলো: দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করতে সরকার গত বছর পুরো মোবাইল ফোন আমদানিতে কর বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন অনেকেই এই আমদানি কর কমানোর দাবি তুলছেন। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

জাকারিয়া শহীদ: সম্পূর্ণ মোবাইল ফোন আমদানি করতে এখন গড়ে ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। বিষয়টিকে দুভাবে দেখা যেতে পারে। মোবাইল ফোন আমদানিতে যখন কর বেশি থাকে, তখন অবৈধ পথে আমদানি বেড়ে যায়। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার উৎপাদন উৎসাহিত করতে সম্পূর্ণ মোবাইলের আমদানি খুব বেশি কমানোও ঠিক হবে না। ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান রাখতে মোবাইল ফোনের আমদানি কর ২৫ শতাংশ করা যেতে পারে। এর কম হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে, বেশি হলে অবৈধ আমদানি উৎসাহিত হবে। ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেট আমদানিতে বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম আলো: গত এক বছরে দেশে অবৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানি আবার বেড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি বন্ধে কী করা যেতে পারে?

জাকারিয়া শহীদ: এই আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব, যদি একটি মোবাইল ফোনের একটি পরিপূর্ণ আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) তথ্যভান্ডার চালু করা হয়। এ তথ্যভান্ডার চালু করতে বিটিআরসির সঙ্গে এখন কাজ চলছে। এটি চালু হলেই ৯০ শতাংশ অবৈধ আ্রমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি ও তৎপরতা দরকার।