'বোকার মতো আচরণ' বন্ধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের: বাফেট

বোকার মতো আচরণ করা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে দূরে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। ছবি: রয়টার্স
বোকার মতো আচরণ করা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে দূরে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। ছবি: রয়টার্স

বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে বিবাদ চলছে, তা থেকে সরে আসা হয়তো সম্ভব নয়। তবে অত্যন্ত বোকার মতো আচরণ করা থেকে এ দুটি দেশকে দূরে থাকতে হবে। এ মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট।

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট এবার মুখ খুললেন যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের বিষয়ে। গতকাল শনিবার নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের বার্ষিক সভায় চীনা বিনিয়োগকারীর এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন বাফেট।

সভায় বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের দুটি পরাশক্তি হয়ে থাকবে। দেশ দুটির বেশ কিছু অভিন্ন স্বার্থ আছে। যেকোনো দুটি বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যে কখনো উত্তেজনাও থাকবে। কিন্তু বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের বিষয়ে ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘আমাদের একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে (ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে) এবং বাণিজ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে মতবিরোধ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর বিশ্বের অনেক কিছু নির্ভর করছে।’

সম্প্রতি শুল্কারোপের নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় সারা বিশ্বেই এই ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতি। আলোচনার দরজা খোলা রেখেও শুল্ক নিয়ে দেশ দুটি যুদ্ধংদেহী অবস্থানে। চলতি বছর চীনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের উন্মুক্ত ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। পরে আবার ৫০ বিলিয়ন ডলারের ১ হাজার ৩০০ চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় চীন সয়াবিন, রাসায়নিকসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। চীনের এ চালকে ‘অশোভন দুর্ব্যবহার’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি এবার চীনের পণ্য আমদানির ওপর আরও একগুচ্ছ কর আরোপের কথা বিবেচনা করছেন। চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্যের ওপর এ কর আরোপ করা হবে—এমন ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এরপর আলোচনায় আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে দেশ দুটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চীনে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল চীন-মার্কিন বাণিজ্য ও বাণিজ্য সহযোগিতার সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় বসে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী স্টিভ মানচিনের বরাত দিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে।’ তবে ওই বিবৃতিতে এটা বলা হয়নি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপ বাতিলের বিষয়ে কিছু ভাবছেন কি না।

তবে চীনা গণমাধ্যমগুলো ওই বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে বেশ আশাবাদী। দেশটির একটি ইংরেজি গণমাধ্যম জানায়, দুই দিনব্যাপী আলোচনায় ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। বাণিজ্য বিরোধে সমাধান আনতে হলে এ ধরনের আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে।

এদিকে চীনের মতো আশাবাদী ওয়ারেন বাফেটও। তিনি চীনে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বয়স এখন ৮৮। আর ৮ সংখ্যা চীনের জন্য সৌভাগ্যের। এটি চীনের জন্য কিছু অর্জন করার সময় বলে মন্তব্য করেন বাফেট।