বেসরকারি কর্মজীবীদের পেনশনে আনতে অর্থমন্ত্রীর চিন্তা বাস্তবায়নে দেরি হবে

>
  • প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই সরকারের।
  • তবে কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেট বক্তৃতায়ও এ বিষয়ে বলবেন অর্থমন্ত্রী

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও সরকার সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালু করতে পারবে না। ফলে বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের পেনশনের আওতায় নিয়ে আসতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের চিন্তা ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন আরও দেরি হবে। কারণ, কাজটি করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই সরকারের। তবে কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেট বক্তৃতায়ও এ বিষয়ে কথা বলবেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
বেসরকারি খাতে পেনশন পদ্ধতি চালুর বিষয়ে ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় প্রথম কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এর মাস দু-এক পরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যেও এ বিষয়ে তাঁর কথা থাকে। পরবর্তী তিন বছরে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, পেনশন-ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দেশে একটি সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালু করতে চান তিনি। দেশের বেসরকারি জনগোষ্ঠীকেও তিনি পেনশনের আওতায় নিয়ে আসতে চান।
অর্থমন্ত্রীর মতে, নগরায়ণের কারণে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে তাঁদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। সরকারের একার পক্ষে এ ঝুঁকি মোকাবিলা করা দুরূহ। তাই দেশের সব শ্রমজীবী মানুষসহ প্রবীণদের জন্য একটি সর্বজনীন ও টেকসই পেনশন পদ্ধতি চালু এখন সময়ের দাবি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সমাজের সর্বস্তরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে অর্থমন্ত্রী বেসরকারি পর্যায়ের কর্মজীবীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে নতুন বাজেটেও বক্তব্য দেবেন। পেনশন-ব্যবস্থাটি হবে অংশগ্রহণমূলক। অর্থাৎ এতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও থাকবে।
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর চিন্তাটি হচ্ছে এমন একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া, যেটির আওতায় প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকেরা আগে নিবন্ধন নেবেন এবং প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখবেন। এর বিকল্প হিসেবে বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের নামে তাঁদের নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে টাকা জমা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। যিনি নিবন্ধন নেবেন, তাঁর নামে সরকারের পক্ষ থেকেও একটি অংশ জমা দেওয়া হবে।
আর এভাবে পেনশন তহবিল নামে বড় আকারের একটি তহবিল গঠিত হবে, যে তহবিলের অর্থ সরকার অন্য কোনো লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে। ওই বিনিয়োগ থেকে যে আয় আসবে, তা প্রতিবছর যাঁর যাঁর হিসাবে জমা হবে। অবসর নেওয়ার পর নিজেদের টাকা, সরকারের টাকা এবং মুনাফা মিলিয়ে যে অঙ্ক দাঁড়াবে, তা থেকেই পেনশন পাবেন কর্মজীবীরা।
সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর চিন্তা বা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাঝখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে। অর্থ বিভাগের একটি দল এ ব্যাপারে ভারতও সফর করে এসেছে। বিদ্যমান পেনশন-ব্যবস্থার কিছু অসুবিধার চিত্র তুলে ধরে ধারণাপত্রে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বিদ্যমান পেনশন-ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এই ব্যবস্থার জরুরি সংস্কার দরকার।
বেসরকারি আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত কর্মজীবীদের অসুবিধার কথাও ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এ ব্যাপারে সরকারের নজরদারি, ব্যবস্থাপনা এবং আইন নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব মূলধনে সঞ্চিত অর্থ ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে সঞ্চয় ফেরতের কোনো সুযোগ নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরাই পেনশন-সুবিধা পাচ্ছেন। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত অর্থাৎ চাকরিবাকরি করছেন এমন ৮ শতাংশ শুধু গ্র্যাচুইটি-সুবিধা পান। অন্যদের জন্য পেনশন-গ্র্যাচুইটি কিছুই নেই।
পেনশন-ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে গেলে গণকর্মচারী (অবসর) আইন ১৯৭৪ এবং এ বিষয়ে যে বিধি রয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে এবং একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে বলেও ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা কীভাবে চালু করা যায়, তার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোই-বা কী হবে—এসব বিষয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেওয়া হবে।’
অর্থসচিব আরও বলেন, ‘তহবিল গঠন করা কঠিন কাজ নয়, মানুষের সাড়াও মিলবে এতে। কিন্তু সেই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হবে কোথায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা হচ্ছে।’