অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ছে

তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কর্মরত ক্রেতাদের দুই জোট—অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রমের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ছে। এই সময়ের মধ্যে উভয় জোট বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গোটাবে। এরপর আর সময় বৃদ্ধি করা হবে না।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস পরিশোধ এবং ঈদের ছুটি সমন্বয়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চুক্তি ছিল, উভয় জোটের কার্যক্রম ৩১ মে (গতকাল) পর্যন্ত চলবে। ইতিমধ্যে আমরা সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ছয় মাসের মধ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কার্যক্রম গোটাবে।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পৃথিবীর আর কোনো দেশে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স নেই। তারা ভিয়েতনামে যেতে পারে না। এমনকি যাওয়ার জন্য প্রস্তাবই করতে পারে না। চীনে নেই, পাকিস্তানে নেই, ভারতে নেই, আছে কেবল বাংলাদেশে। না, এটা হবে না। এখানে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আর কোনো প্রয়োজন হবে না। তারা চলে যাওয়ার পর জাতীয় উদ্যোগে গঠিত সংস্কারকাজ সমন্বয় সেল (আরসিসি) পোশাক কারখানাগুলোর তদারকি করবে।’

হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবারের শুনানিতে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম গোটাতে ছয় মাসের সময় দিয়েছেন। ১৬ মে জোটের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তিন মাস বৃদ্ধি করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমানের দায়ের করা রিট পিটিশনের শুনানিতে হাইকোর্টের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্মার্ট গ্রুপের আইনজীবী ইউসুফ আলী আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালত অ্যাকর্ডকে অন্তর্বর্তীকালীন তদারক কমিটির (টিএমসি) অধীনে কাজ করে ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম গোটাতে নির্দেশ দিয়েছেন।’

১০ মে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ নতুন করে ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় উদ্যোগে গঠিত সংস্কারকাজ সমন্বয় সেল (আরসিসি) সক্ষমতা অর্জন না করলে ছয় মাস করে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়বে। আরসিসি সক্ষম হয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য গঠিত হয়েছে টিএমসি। এতে সরকার, ব্র্যান্ড, শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধি রয়েছে। পরের সপ্তাহেই হাইকোর্ট থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার আসে। ফলে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। অ্যাকর্ড ১ হাজার ৬২০ পোশাক কারখানার পরিদর্শন করেছে। এসব পোশাক কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ। তবে সংস্কারকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি দেখাতে না পারায় এখন পর্যন্ত ১০৯ কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অ্যাকর্ড। অন্যদিকে অ্যালায়েন্স ৬৭২ পোশাক কারখানার পরিদর্শন করেছে। এসব কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ।

১০ জুনের মধ্যে মজুরি, ১৪ জুনের মধ্যে ঈদ বোনাস 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর সহসভাপতি মনসুর আহমেদ, বিটিএমএর পরিচালক বি এম শোয়েব ১০ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের মে মাসের মজুরি ও ১৪ জুনের মধ্যে ঈদ বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দেন।

পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের উদ্দেশে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আপনারা কোনো রকম উসকানি বা বিপথগামী লোকের ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। শ্রমিকের বেতন-বোনাস বাকি রেখে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কোনো দিন ঈদ করতে যায়নি। ভবিষ্যতেও যাবে না। এটি আমাদের বিশ্বাস। এমনও হয়েছে, শ্রমিকের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য আমরা কারখানার মেশিনপত্র ও কাপড় বিক্রি করেছি। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড়া দেওয়া হবে না। শ্রমিকের বেতন-ভাতা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’