চা পানের ব্যয় বেড়ে গেল

আপনি কি চা পান করতে পছন্দ করেন? তাহলে এখন থেকে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তুতি নিন। বাজারে চায়ের দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে চা কিনতে গেলে আপনাকে প্রতি ৪০০ গ্রামের প্যাকেটে ৩০ টাকার মতো বেশি দাম দিতে হবে। আর যদি এক কেজি পরিমাণে কেনেন, তাহলে ব্র্যান্ডভেদে বাড়তি দিতে হবে ৫০-৬০ টাকা।

রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা জানান, সম্প্রতি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চায়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বাজারে বেশি প্রচলিত চায়ের দাম কেজিতে নির্ধারণ করা হয় ৩৮০-৩৯০ টাকা। এ ছাড়া ফুটপাতের চা বিক্রেতারা যে চা বেশি কেনেন, সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি ৪০০ গ্রাম ১৮০ টাকা দরে। যা আগের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি বলে জানান চায়ের দোকানদারেরা।

চা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর চায়ের যে নিলাম হচ্ছে, তাতে দাম অনেক বেশি পড়ছে। এ কারণেই খুচরা বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের দাম বাড়েনি। দেশে উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বড় কোম্পানিগুলো বাড়তি দাম দিয়ে চা কিনে রাখছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হাজি মিজান স্টোরের খুচরা বিক্রেতা জাকির হোসেন একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের চায়ের নাম উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ব্র্যান্ডের ৪০০ গ্রামের এক প্যাকেট চায়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি এখন ২০০ টাকা। আমরা সেটা ১৯০ টাকায় বিক্রি করি। এ চায়ের এমআরপি কিছুদিন আগেও ১৬৮ টাকা ছিল।’

একই হারে মূল্যবৃদ্ধির তথ্য জানান কাজীপাড়া এলাকার মুদি দোকানি মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দাম বাড়ানো হয়। এর আগে কোম্পানিগুলো চায়ের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। উল্লেখ্য, দেশীয় চা–বাগানের চা কিনে কয়েকটি কোম্পানি দেশজুড়ে প্যাকেটজাত চা বাজারজাত করে।

চায়ের দোকানদারেরা অবশ্য এখনো দাম বাড়াননি। ফুটপাতে প্রতি কাপ চা ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ফুটপাতের চা বিক্রেতা মোতাহার হোসেন বলেন, চায়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের খরচ বেড়েছে। কিন্তু দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই চায়ের বাড়তি মূল্যটা তাঁদের লাভের অংশ থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত চা-বাগানের সংখ্যা ১৬৪টি। এসব বাগানে ২০১৭ সালে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম। ২০১৬ সালে দেশে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে চা উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৮ লাখ কেজি, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সামান্য বেশি। এ বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের প্রকৃত উৎপাদনের চেয়ে কম।

বর্ষা মৌসুমে চায়ের মান ভালো হয়। এ কারণে এই মৌসুমের চা কিনতে বেশি আগ্রহ দেখা যায় বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম পড়েছে ২৫৩ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২০৪ টাকা। সর্বশেষ আগস্ট মাসে নিলামে চায়ের কেজি ওঠে ২৭৮ টাকায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের চার-পাঁচটি বড় বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বেশি পরিমাণে চা কিনে রাখছে। তারা মনে করছে, দেশে উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী হবে না। এ ছাড়া বর্ষার চা মানে ভালো হয় বলেও এ সময়ের চা তারা কিনে রাখছে। দাম তাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। তিনি আরও বলেন, চা আমদানিতে এখন যা শুল্ক ও কর আছে, তাতে ভালো মানের প্রতি কেজি চায়ের দাম ৪০০ টাকার মতো পড়বে। ফলে দেশ থেকে বাড়তি দাম দিয়ে চা কেনা ভালো মনে করছেন তাঁরা।

বিশ্ববাজারে দর
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চায়ের দাম বাড়েনি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২ দশমিক ৯৭ ডলার, যা আগস্টে ২ দশমিক ৮১ ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৭ সালে বিশ্বে চায়ের গড় দাম ছিল ৩ দশমিক ১৫ ডলার।
দেশে এখন প্রতি কেজি চা আমদানিতে প্রায় ৮৯ শতাংশ কর দিতে হয়। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ৪ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট রয়েছে।
একসময় বাংলাদেশ চা রপ্তানি করে বেশ ভালো আয় করত। এখন চা আমদানি করতে হচ্ছে। চা বোর্ডের হিসাবে, ২০১৭ সালে দেশে ৮ কোটি ৫৯ লাখ কেজি চা ভোগ হয়েছে। উৎপাদন ছিল তার চেয়ে কম।