রাইড শেয়ারিংয়ে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ 'সহজের'

মালিহা মালেক কাদির।
মালিহা মালেক কাদির।

যানজটে নাকাল ঢাকাবাসীর আরেকটি বড় সমস্যা হলো পরিবহনস্বল্পতা। নির্ধারিত সময়ে জায়গামতো পৌঁছাতে প্রায়ই বাড়তি পয়সা গুনতে হয় এই নগরবাসীকে। এ অবস্থায় মানুষকে সপরিবারে স্বস্তিতে চলাফেরার সুযোগ করে দিচ্ছে রাইড শেয়ারিং।

এখন দেশে বেশ কয়েকটি রাইড শেয়ারিংসেবা প্রতিষ্ঠান চালু আছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান হলো ‘সহজ লিমিটেড’। সম্প্রতি দেশে প্রযুক্তি খাতে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এনেছে তারা, যার পরিমাণ দেড় কোটি ডলার। এ ছাড়া, সিলিকনভ্যালিভিত্তিক কোম্পানি ৫০০ স্টার্টআপ ও চীনের ভিসি লিনিয়ারও সহজে বিনিয়োগ করেছে। সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা মালেক কাদির।

মালিহা মালেক কাদির বলেন, এসব বিনিয়োগ সহজের সেবা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। দেশে বর্তমানে বড় একটি আন্তর্জাতিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি কাজ করছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে দেশে বড় ও মানসম্পন্ন বিনিয়োগ দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গোল্ডেন গেট নামের যে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান সহজে দেড় কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারব আমরা। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানির শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে স্থানীয় কোম্পানি তৈরি হয়েছে। সহজও দেশে সে রকম প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চায়।’

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তরুণ নেতাদের একজন মালিহা কাদির। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তরুণ নেতাদের একজন মালিহা কাদির। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকার বাইরেও শিগগিরই রাইড শেয়ারিংসেবা চালু করবে সহজ। এ ছাড়া গাড়ি শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মও বড় করার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে মালিহা কাদির বলেন, সহজ দেশের জন্য একটি সুপার অ্যাপ তৈরি করছে। এই অ্যাপ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সব প্রয়োজনীয় সেবা দেবে। একই অ্যাপে যেমন রাইড শেয়ারিং ও খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে, তেমনি টিকিটসহ নতুন আরও অনেক সেবা থাকবে।

মালিহা কাদির আশা করছেন, মানুষ প্রতিদিন সহজ অ্যাপ ব্যবহার করবে। সুপার অ্যাপ দিয়েই তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ঠিক এ উদ্দেশ্যেই আজ থেকে চার বছর আগে সহজ নামটি বেছে নেওয়া হয়। কারণ স্বপ্নটা ছিল এ রকম, সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এটি ব্যবহার করবে।

নারী হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তার ব্যাপারটা মালিহা কাদিরের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা যে রাইড শেয়ারিংকে পেশাদারির সঙ্গে গ্রহণ করতে শুরু করেছেন, তাতে তিনি খুবই খুশি। একজন নারী স্বাভাবিকভাবেই আরেকজন নারীর সঙ্গে রাইড শেয়ারিং করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই নারীরা যত বেশি সংখ্যায় রাইড শেয়ারিংয়ে আসবেন, নারীর চলাচলের স্বাধীনতা ততই বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সহজ নারী বাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের রাইড শেয়ারিংয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করছে। ইতিমধ্যে সহজের প্ল্যাটফর্মে অর্ধশতাধিক নারী কাজ করছেন বলে তিনি জানান।

রাইড শেয়ারিংয়ের কারণে যানজট বাড়ছে—এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে মনে করেন মালিহা কাদির। তিনি বলেন, অনেকেই গাড়ি তাঁর বাড়ির গ্যারেজে রেখে দিচ্ছেন না, তা ঠিক। কিন্তু এই ব্যবস্থার কারণে অনেকেই গাড়ি বের না করে শেয়ারিং সেবা নিচ্ছেন। ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি বাইক আছে। সেখানকার মানুষ রাইড শেয়ার করছে। তিনি মনে করেন, রাইডারদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

নগরীতে প্রায়ই বাইক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই এ ক্ষেত্রে রাইডার ও যাত্রীদের বিমা দিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে মালিহা কাদির বলেন, সহজ প্রথমেই চালকদের বলে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাঁদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। রাইডার ও যাত্রীদের বিমার আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।