বিনিয়োগ করলে করের বোঝা কম

>
  • বিনিয়োগ করে করের বোঝা কমানো যায়
  • সঞ্চয়পত্র কিনলে মিলবে কর ছাড় সুবিধা
  • শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত
  • ডিপিএসে মিলবে কর রেয়াত

করের টাকার অঙ্ক নিয়ে অনেক করদাতাই আতঙ্কে থাকেন। প্রতিবছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) হাজার হাজার টাকা কর দেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনি চাইলেই করের বোঝা কিছুটা কমাতে পারেন। বছর শেষে যে পরিমাণ কর হবে, বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নিয়ে সেটা কমাতে পারবেন। অবশ্য সে জন্য জীবনযাত্রায় সারা বছরের খরচের পর বিনিয়োগের জন্য বাড়তি টাকা থাকতে হবে। সেই টাকা আপনি যদি সরকারের নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনিও কর রেয়াত পাবেন। বিনিয়োগ করার কারণে বছর শেষে আপনার ওপর করের পরিমাণ কমে আসবে।

কর সমন্বয় করার সবচেয়ে সহজ ও ভালো উপায় হলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা। ভবিষ্য তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা রাখলেও এই সুবিধা
পাবেন। আবার শেয়ার কিনলেও মিলবে এমন কর ছাড়। সব মিলিয়ে ২৫টি খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে বছর শেষে সহজেই করের বোঝা কমিয়ে আনতে পারবেন।

আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিয়ে কর দেওয়া যাবে। মাত্র এক মাস সময় আছে। এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, তাই জেনে নিন কোথায় বিনিয়োগ থাকলে মিলবে কর ছাড় সুবিধা।

কোথায় বিনিয়োগ করবেন

সম্প্রতি এনবিআর চলতি মৌসুমের কর বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে কর ছাড় পাওয়ার জন্য ২৫টি খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এই খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সঞ্চয়পত্র কেনা; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সুপার এনুয়েশন ফান্ডে দেওয়া চাঁদা; যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ; শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ; কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কেনা; জাতির জনকের স্মৃতিরক্ষায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান। এ ছাড়া জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের কিছু খাতে দান করলেও কর ছাড় পাওয়া যাবে। এগুলো হলো জাকাত তহবিল; এনবিআর অনুমোদিত দাতব্য হাসপাতাল; প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান; মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক; আহ্‌ছানিয়া ক্যানসার হাসপাতাল; আইসিডিডিআরবি; সিআরপি (সাভার); সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এশিয়াটিক সোসাইটি; ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান।

কীভাবে সুবিধা পাবেন

এবার আসা যাক বিনিয়োগের বিপরীতে কীভাবে আপনি কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। কোনো করদাতা তাঁর বার্ষিক মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করলেও কর রেয়াত পাবেন। তবে বিনিয়োগের কত অংশে কত হারে কর বসবে, তা–ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এনবিআর।

কোনো করদাতার আয় যদি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়, তবে তিনি ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাবেন। ওই ব্যক্তি তাঁর আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। তাহলে ওই করদাতা ওই বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ কর ছাড় পাবেন। এর মানে হলো, ওই ব্যক্তি বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের পরিমাণ সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। বছর শেষে করের পরিমাণ যা–ই হোক না কেন, ওই কর রেয়াত হিসাবে সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা বাদ যাবে।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কোনো করদাতার বার্ষিক আয় যদি ১০ লাখ টাকা হয়, করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ হিসাব করলে ওই ব্যক্তির করযোগ্য আয় হবে সাড়ে সাত লাখ টাকা। ওই সাড়ে সাত লাখ টাকার প্রথম চার লাখ টাকার ১০ শতাংশ হারে ৪০ হাজার টাকা, পরের সাড়ে তিন লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৫২ হাজার টাকা কর যোগ হবে। সব মিলিয়ে ওই ব্যক্তির মোট কর হবে সাড়ে ৯২ হাজার টাকা। বিনিয়োগের জন্য ওই করদাতা কর ছাড় পাবেন সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। ফলে রেয়াত সুবিধার পর বাস্তবে ওই করদাতাকে কর দিতে হবে ৫৫ হাজার টাকা।