৫০ ডলারে নেমে এল তেলের দাম

অপরিশোধিত তেলের দাম আরও এক দফা কমল। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম ৭ শতাংশ কমেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরের পর এই প্রথম তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ দশমিক ৪২ ডলারে নেমে এল।

অথচ গত অক্টোবরেই তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলারে উঠেছিল। কিন্তু অতি সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা, চাহিদা পড়ে যাওয়া—এসব কারণে এক মাসের মধ্যে তেলের দাম এতটা কমে গেছে। এক মাস আগেই পর্যবেক্ষকেরা দিন গুনছিলেন, তেলের দাম কবে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠবে। এখন তেলের এই পড়তি দাম দেখে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

সোসিয়েট জেনারেলের পণ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান মাইকেল হেইগ বলেন, ছয় সপ্তাহ ধরে দাম যে হারে কমছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার জোগাড়।

তেল খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, আগামী মাসে ভিয়েনায় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে সৌদি আরবসহ অন্যরা তেলের সরবরাহ যথেষ্ট হারে কমাবে এবং তাতে বাজার কিছুটা সাশ্রয়ী হবে। তবে দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওপেকসহ সৌদি আরবকে উৎপাদন না কমাতে চাপ দিচ্ছেন। আর সম্প্রতি তিনি যেভাবে সৌদি আরবের প্রশংসা করলেন, তাতে বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা, সৌদি আরব সম্ভবত উৎপাদন তেমন একটা কমাবে না।

তেলের দামের বৈশ্বিক মানদণ্ড হচ্ছে অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম। শুক্রবার এই তেলের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। শুক্রবার ২০১৮ সালের মধ্যে ব্রেন্টের দাম সর্বনিম্ন ৫৯ ডলারে নেমে আসে। তেল কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় শুক্রবার ডাও সূচকের মান ১৭৮ পয়েন্ট কমে যায়। শেভরন ও কনোকোফিলিপসের শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ পড়ে যায়। আর শেল উৎপাদক ইওজি রিসোর্সের দাম পড়েছে ৫ শতাংশ।

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে এই আশঙ্কায় সৌদি আরবসহ ওপেকভুক্ত দেশগুলো তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এরপর ভারত, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশকে ইরান থেকে তেল কেনার বেলায় ছাড় দিলে বাজারে তেলের সরবরাহ অনেকটা বেড়ে যায়। এতে বাজারে তেলের দাম ক্রমেই কমতে কমতে এ জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।    

অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা

অন্যদিকে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আবারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা ইতিমধ্যে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কম করে ধরছেন। বিশ্বের তৃতীয় ও চতুর্থ অর্থনীতি ইতিমধ্যে সংকুচিত হচ্ছে। চীনের প্রবৃদ্ধিও কমছে। এসব কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির চালিকা শক্তি জ্বালানি তেলের বাজার রমরমা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।  

এফএক্সটিএমের বিশ্লেষক লুকমান ওতুনুগা বলেন, ‘তেলের সরবরাহ একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে চাহিদা কমছে—এই দুই কারণে তেলের বাজারে বিপর্যয় নেমে আসছে।’ তেলের দাম এভাবে কমার কারণে অনেকেই হতবুদ্ধ হয়ে গেছেন। সোসিয়েট জেনারেলের হিসাব মতে, চলতি প্রান্তিকে বড় বড় তহবিলের ক্ষতির পরিমাণ ৭৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। পণ্যের বাজারের পরিস্থিতিও হতাশাজনক।

তবে তেলের পড়তি দাম ভোগ্যপণ্য ক্রেতাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সামনে বড়দিন, তার আগে ২২ নভেম্বর থ্যাংকসগিভিং ডেও পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে মানুষ বেড়াতে যায়। তেলের দাম কম থাকায় মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার এক গ্যালন জ্বালানির দাম ছিল ২ দশমিক ৫৮ ডলার, যা এক মাস আগেও ছিল ২.৮৪ ডলার।

এই পরিস্থিতিতে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো আগামী মাসে ভিয়েনায় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে।