সৌরবিদ্যুতে ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে জেপিএল

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৮ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে জুলস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দেড় হাজার কোটি টাকার সমান। ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জেপিএল চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০০ একর জমি চেয়েছে।

জমি ইজারা নিতে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি সই করে জেপিএল। বেজার কার্যালয়ে আয়োজিত এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ও জেপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূহের লতিফ খান উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারকে বেজার সচিব গাজী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান ও জেপিএলের নূহের লতিফ খান সই করেন।

এ নিয়ে বেজা চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে তিনটি বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব পেল। সব কটিই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প। প্রায় চার হাজার একর আয়তনের চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এটি হবে চাঁদপুরের উত্তর মতলবে।

জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, এটা প্রাথমিক সমঝোতা। চূড়ান্তভাবে জমি দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিপিডিবি) ওপর। তারা যদি এ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়, তাহলেই কেবল বেজা জমি বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনা করবে।

জেপিএল জানিয়েছে, তারা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশাপাশি চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি মাল্টিপারপাস জেটি ও ৩৭ কিলোমিটার বিস্তৃত ১৩২ কেভির একটি সঞ্চালন বা ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করবে। নূহের লতিফ খান বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বা পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টস (পিপিএ) ও বাস্তবায়ন চুক্তি বা ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (আইএ) থাকার কারণে এ খাতে বিনিয়োগের বিপরীতে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। ফলে বিদ্যুৎ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন।

নূহের লতিফ খান আরও বলেন, তাঁদের প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর এখনকার খরচের চেয়ে বেশি হবে না। পাশাপাশি তেলের দামের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচে যে ওঠানামা হয়, সৌরবিদ্যুতে সেটা হবে না।

জেপিএল জানায়, তাদের বিনিয়োগে কক্সবাজারের টেকনাফে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র গত সেপ্টেম্বরে চালু হয়েছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা বর্তমানে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরে নতুন প্রকল্পের জমির জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর এখন বিপিডিবির কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে। সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে জমি বেশি লাগে। তাই জমির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা আগে দরকার।

চাঁদপুরে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। একটি হবে উত্তর মতলবে। অন্যটি হবে হাইমচরে। উত্তর মতলবেই বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অনুন্নত জমি দেবে বেজা, যা বিনিয়োগকারীদের ভরাট করে নিতে হবে। তবে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের রাস্তাঘাট ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বেজার পক্ষ থেকে।

বেজা একই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গত বছর জুন মাসে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি দিতে পাওয়ার চায়না নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে নরওয়ের স্ক্যাটেক সোলার এএসএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একই ধরনের আরেকটি সমঝোতা স্মারকে সই করা হয়। স্ক্যাটেক চাঁদপুরে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশে স্ক্যাটেকের বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এস কে খান অ্যান্ড কোম্পানি। স্ক্যাটেক বাংলাদেশে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছে।