বিক্রি ভালো, আরও বৃদ্ধির আশা

বাণিজ্য মেলায় নিজেদের প্যাভিলিয়নে আইসক্রিমের কোন তৈরি করে লাভেলো। ফলে গ্রাহকেরা তাজা কোনের আইসক্রিমের স্বাদ নিতে পারেন এ প্যাভিলিয়নে। গতকাল শেরেবাংলা নগরে।  ছবি: প্রথম আলো
বাণিজ্য মেলায় নিজেদের প্যাভিলিয়নে আইসক্রিমের কোন তৈরি করে লাভেলো। ফলে গ্রাহকেরা তাজা কোনের আইসক্রিমের স্বাদ নিতে পারেন এ প্যাভিলিয়নে। গতকাল শেরেবাংলা নগরে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থী সমাগমে খুশি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছে, মেলার প্রথম ১৫ দিনে পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ আদেশের হার বেশ ভালো। এতে তারা সন্তুষ্ট। পাশাপাশি মেলার বাকি দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা তাদের। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সাধারণত মেলার শেষ ভাগ বেশি জমজমাট থাকে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ৯ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলার ১৯তম আয়োজন শুরু হয়। ইতিমধ্যে মেয়াদের অর্ধেক, অর্থাৎ ১৫ দিন পেরিয়ে গেছে। মেলার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীর ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখন দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করছেন। অবশ্য ছুটির দিনে সংখ্যাটি অনেক বেড়ে যায়। গত শুক্রবার প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছিলেন।

বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন হারে মূল্যছাড় দিচ্ছে। আবার নতুন নতুন পণ্যও নিয়ে এসেছে অনেকে। এর সুফলও মিলছে। ছাড়ের কারণে মেলায় বিক্রি বাড়ছে। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করে পণ্যভর্তি ব্যাগ নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়ছেন।

মেলার মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে হাতের ডান দিকে লাভেলো আইসক্রিমের স্টল। গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী হাতে ব্যাগ নিয়ে আইসক্রিম কিনে খাচ্ছেন। তাঁদের একজন মোয়াজ্জেম হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলা থেকে প্লাস্টিকের সামগ্রী, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, সন্তানের পোশাক ও দুটি ইলেকট্রনিক পণ্য কিনেছেন। সব কটিতেই ছাড় মিলেছে।

লাভেলো আইসক্রিমের নির্বাহী রফিকুল হাসান বলেন, মেলায় এখন পর্যন্ত বিক্রি ভালো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সেটা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, লাভেলো মেলাতেই আইসক্রিমের কোন তৈরি করছে। এতে তাজা কোনের আইসক্রিমের স্বাদ নিতে পারছেন গ্রাহকেরা।

লাভেলো তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একটি পণ্য। ২০১৬ সালের শুরুতে এটি বাজারে আনা হয়। রফিকুল হাসান বলেন, তাঁদের কোম্পানি পণ্যের মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয় না। এ কারণে বেশ ভালো বাজার পেয়েছেন তাঁরা।

মেলার প্রথম ১৫ দিনে ভালো ফরমাশ পাওয়ার খবর দিলেন আসবাবের সুপরিচিত ব্র্যান্ড হাতিলের উপব্যবস্থাপক (খুচরা বিক্রি) লায়লা ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘বিক্রির পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ভালো। সাধারণত শুক্র ও শনিবার চাপ বেশি থাকে। এখন আমরা দেখছি অন্য দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ক্রেতা আসবাব দেখতে আসছেন, কিনছেন।’

হাতিল এবারের মেলায় নতুন এক ধরনের সোফা নিয়ে এসেছে, যা বিছানায় রূপান্তর করা যায়। আরেক ধরনের সোফা প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট-বড় করা যায়। প্রাকৃতিক রঙের চেয়ার, বেশি মজবুত বেন্ট উড, নতুন ধরনের খাবার বা ডাইনিং টেবিল ইত্যাদি নানা নতুন পণ্য মিলছে হাতিলের প্যাভিলিয়নে। লায়লা ইশরাত জাহান বলেন, তাঁদের বিশেষ আকর্ষণ থ্রিডিতে নিজের কক্ষের আকার অনুযায়ী আসবাব সাজিয়ে দেখতে কেমন লাগে তা যাচাই করা। এ ছাড়া ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মূল্যছাড়ও রয়েছে।

মেলায় প্রথমবারের মতো আলাদা স্টল নিয়ে পণ্য বিক্রি করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যন্ত্রে তৈরি জাজিম বা ম্যাট্রেস, লেপ বা কমফোর্টার ইত্যাদির ব্র্যান্ড কমফি। কোম্পানিটি তাদের পণ্যে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে। মূল্যছাড় দেওয়ার পর যে টাকা পরিশোধ করতে হবে, তা মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবের মাধ্যমে দিলে আরও ১৫ শতাংশ (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা) ছাড় পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে কমফির বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক তাজুল ইসলাম বলেন, তাঁরা সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতাদের মানসম্পন্ন বালিশ বা পিলো, কমফোর্টার, ম্যাট্রেস, নকশিকাঁথা ও শিশুদের বিছানা বা বেবি সেট বিক্রি করছেন। এখন পর্যন্ত মেলায় বিক্রির পরিমাণ সন্তোষজনক।

মেলা প্রাঙ্গণের মাঝামাঝি একটি স্টলের সামনে বিছানো চটের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কাদের খান নামের এক দর্শনার্থী এবং তাঁর সঙ্গে আসা আরও কয়েকজন। প্রত্যেকের কাছে তিন-চারটি করে ব্যাগ। জানতে চাইলে কাদের খান বলেন, মেলায় সবাই কিছু না কিছু কেনে। তাঁরাও কিনেছেন।