প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকারদের জন্য ঋণ

দেশের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। তবে ঋণ পাবেন তাঁরাই, যাঁরা সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের বেশি নয়।

দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় কর্মসংস্থান ব্যাংক। ব্যাংক গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বেকার যুবকদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, কুটির শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া, দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি উদ্দেশ্য পূরণে ঋণ দিয়েও যাচ্ছে। তবে যে পরিমাণ ঋণের চাহিদা, সে পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই ব্যাংকটির।

কর্মসংস্থান ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য চাষ, দুগ্ধ খামার, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ, চালকল, বেকারি, স মিল, তাঁতশিল্প, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিনোদন পার্ক, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ে ব্যাংকটি এযাবৎ পাঁচ লাখ লোককে ঋণ দিয়েছে, পরোক্ষভাবে যার উপকারভোগী ২০ লাখ লোক।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটি ঋণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করতে চাইছে। এ জন্য শরণাপন্ন হয়েছে প্রথমত, বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং দ্বিতীয়ত, অর্থ মন্ত্রণালয়ের। ব্যাংকটি ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচি’র আওতায় পুনঃ অর্থায়ন বাবদ ২০০ কোটি টাকা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। আর এর বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং অর্থ বিভাগ—উভয়েই এ ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ব্যাংককে কয়েকটি শর্ত পূরণের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ঋণের প্রতিটি কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে তা অর্থ বিভাগকে জানানো, ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বকেয়া অর্থের হালনাগাদ তথ্য অর্থ বিভাগকে জানানো, গ্যারান্টির মেয়াদের মধ্যেই ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধ করা এবং ঋণের অর্থ পরিশোধের সব কাগজপত্র অর্থ বিভাগে পাঠানো।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে সম্প্রতি একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার। সারসংক্ষেপটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৪টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৪৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ব্যাংকটির ঋণের স্থিতি ছিল ১ হাজার ২৯৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৬ শতাংশ।

কর্মসংস্থান ব্যাংক সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। পরিশোধিত মূলধন এবং ঋণ গ্রহীতাদের আমানতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ব্যাংক প্রশাসনিক খরচ চালায় এবং রিজার্ভ সংরক্ষণ করে। এরপর যে অর্থ বাকি থাকে, তার একটি অংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলে তা ব্যাংকটি গঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে। অর্থসচিব তাঁর সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন কর্মসংস্থান ব্যাংক আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃ অর্থায়ন ঋণ নিয়েছে এবং ঋণের সুদ নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্যাংকটির মহাব্যবস্থাপক নির্মল নারায়ণ সাহা গতকাল বলেন, ‘এ বছর ১ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে ঋণের চাহিদা আরও বেশি। ২০০ কোটি টাকা পেলে ব্যাংকটি আরও মুনাফা করতে পারবে, আরও মানুষ উপকৃত হবেন।’