লাভ দূরের কথা, ব্যয়ই উঠছে না

>

• মৌসুমের শুরুতেই ‘সস্তা’ ভারতীয় পেঁয়াজে বাজার সয়লাব
• দেশীয় চাষিদের উৎপাদন খরচই উঠছে না

সরকারি হিসাবেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় গড়ে ১৭ টাকার বেশি। তা বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন কেজিপ্রতি ১২-১৩ টাকা। দাম আরও কম সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের। ভারতীয় এই জাতের পেঁয়াজ আবাদ করে কৃষক দর পাচ্ছেন কেজিতে ৪-৬ টাকা।

 এই হতাশাজনক দামের কারণ ভরা মৌসুমে অবাধ আমদানি। গত ডিসেম্বর থেকে দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। একই সময় ভারত থেকেও প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আসছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ভালো দাম মিলছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) এক প্রতিবেদনে মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক নেই।

ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি প্রতিবেদনটি তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেদনে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম চলে বিধায় এ সময় ১৫-২০ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৩২ হাজার টন। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বছরে দেশে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। এটা অবশ্য সংরক্ষণে ওজন কমে যাওয়া ও পচে যাওয়ার হিসাব বাদ দিয়ে।

প্রতিবছর নভেম্বরের শুরুতে দেশে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করে। এই পেঁয়াজ ছোট পেঁয়াজ রোপণ করে উৎপাদিত হয়। এটি সংরক্ষণ করা যায় না। বীজ থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ বছরজুড়ে সংরক্ষণ করা যায়। গত ডিসেম্বরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসার অনেক আগে থেকেই ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক বেশি ছিল। ফলে পেঁয়াজ সংরক্ষণকারী চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়েছেন।

উৎপাদন ব্যয় ১৭.৩৮ টাকা

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের একটি হিসাব যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ দেখানো হয়েছে ১৭ টাকা ৩৮ পয়সা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১ একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় ৯৭ হাজার ৩৮৩ টাকা। প্রতি একরে ৫ হাজার ৬০ কেজির মতো পেঁয়াজ হয়। ট্যারিফ কমিশন প্রতি কেজি পেঁয়াজে কৃষকের মুনাফা ২০ শতাংশ ধরে কাঙ্ক্ষিত দর ধরেছে ২১ টাকা।

রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়ত মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, গতকাল রোববার সেখানে সুখসাগর কেজিপ্রতি ৭-৮ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১৩ থেকে ১৬ টাকা দরে বিক্রি হয়।

কৃষক কত পান?

পেঁয়াজ উৎপাদনকারী তিনটি জেলায় খোঁজ নিয়ে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের দর মিলছে ৪-৬ টাকা। অন্যদিকে অন্যান্য দেশি পেঁয়াজের দর মিলছে মানভেদে ১০ থেকে ১৩ টাকা। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনে সুপরিচিত। ওই এলাকার পেঁয়াজের ফড়িয়া ব্যবসায়ী আবদুল মতিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দর খুবই কম। তাই কৃষকেরা ব্যাপক লোকসান দিচ্ছেন।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের চাষি মো. সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে এখন কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দর কেজিপ্রতি ১৩ টাকার মতো। তিনি বলেন, এবার পেঁয়াজে ব্যাপক লোকসান। বাজারে দাম নেই। এর মধ্যে কয়েক দিন টানা বৃষ্টিতে আবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন মৌসুমের হালি পেঁয়াজ ১৫ দিন পর বাজারে আসতে শুরু করবে।

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, প্রতিবছর তিনি ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেন। এবার করেছেন ১০ বিঘা। গত মৌসুমেও লোকসান হয়েছে। তাই এবার সরিষা ও গম আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছেন।