মজুত আছে, বিক্রি নেই

>

• ৯৫ শতাংশ চালকলই পুলহাট এলাকায়
• মালিকেরা বলছেন, তাঁদের প্রায় সবার কাছেই চালের মজুত রয়ে গেছে
• চালের বিক্রি নেই, কিন্তু ব্যাংকের সুদ বেড়ে যাচ্ছে

দিনাজপুর সদরের ৯৫ শতাংশ চালকলই পুলহাট এলাকায়। জেলা চালকল মালিক গ্রুপের কার্যালয়ও এখানে। গতকাল শনিবার ছিল সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। হাজারখানেক চালকল মালিক ভোট দিতে আসেন। ভোট ছাপিয়ে তাঁদের আলোচনা ছিল ব্যবসার মন্দা, ব্যাংকঋণ আর আসন্ন বোরো মৌসুমের কেনাকাটা নিয়ে।

চালকল মালিকেরা বলছেন, তাঁদের প্রায় সবার কাছেই চালের মজুত রয়ে গেছে। বাজারে ভারতীয় চালের সরবরাহ থাকায় তাঁদের চাল বিক্রি হচ্ছে না। আগামী ২০ দিনের মধ্যে বোরো মৌসুমের ধানও বাজারে আসবে।

পুলহাটের মাশিমপুর এলাকার মেসার্স হৃদয় অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. মোর্শেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চালকল মালিকদের কাছে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও সরকার ভারতীয় চাল আনছে। সরকার বারবার বলার পরও ব্যাংকঋণের সুদহার কমেনি। এবার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণ নিতে হয়েছে। চালের বিক্রি নেই, কিন্তু ব্যাংকের সুদ বেড়ে যাচ্ছে।

গতকাল পুলহাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হাসকিং ও অটো রাইস মিল বন্ধ। একসময়ের কর্মব্যস্ত মিলগুলো নিশ্চুপ পড়ে আছে। মিলগুলোয় কথা বলার মতো লোকজনও নেই।

মেসার্স সাইফুল্লাহ অটো রাইস মিলে ধান থেকে চাল উৎপাদন করে এখানেই মজুত করেন অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ীদের নিজস্ব মিল নেই। গতকাল এই মিলে গিয়ে দেখা যায়, গুদামে বস্তাভর্তি চাল স্তূপ করে রাখা। চাল মজুতকারীদের একজন আয়নাল আলী বলেন, ‘আর ২০ দিন পরেই নতুন ধান উঠবে। পুরোনো চাল ধরে রেখে কী হবে? খরচের টাকা উঠলেই বিক্রি করে দেব।’

পুলহাটের মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাস আগে মোটা জাতের গুটি স্বর্ণ চাল বিক্রি হয়েছে ২৬ টাকা কেজি। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি নাজিরশাইলের দাম ৪০–৪১ টাকা। দুই মাস আগেও যা ছিল ৪৪ টাকা। মিনিকেট চালের দামও কেজিতে কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা। চিকন জাতের ২৮ চাল প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, যা ছিল ৩৭ টাকা। অন্যদিকে কেজিপ্রতি ভারতীয় নাজিরশাইলের দাম ৪৮ টাকা, শম্পা কাটারি ৪৮ টাকা।

চম্পা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা বাড়ছে, তা–ও কোনো আলোচনা নেই। কিন্তু চালের দাম ৫০ পয়সা, ১ টাকা বাড়লেও তুমুল আলোচনা হয়। ব্যবসায়ীরা ভেবেছেন, দাম বাড়ে কি না, আরেকটু দেখি। এখন গলায় এসে ঠেকেছে।’

দিনাজপুরে পাইকারি ও খুচরা চালের ব্যবসাকেন্দ্র বাহাদুর বাজার। এই বাজারের একজন পুরোনো ব্যবসায়ী খাদ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম রাব্বানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চালের বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। অন্য বছর এমন সময়ে ব্যবসা ভালোই থাকত।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সুজা উর রব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সময়ে কৃষক ও চালকল মালিক—কোনো পক্ষই ভালো নেই। সরকার প্রচুর চাল আমদানি করায় ধান–চালের দাম নিম্নমুখী। ব্যাংকের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে চালকল মালিকেরা চাপে পড়ছেন। সামনের বোরো মৌসুমেও এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।