রাজস্ব আদায় লক্ষ্য সোয়া তিন লাখ কোটি টাকা

>

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরকে এবারের চেয়ে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে।

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। এনবিআরের এ লক্ষ্য চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে ১৭ শতাংশ বা প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছর এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্য কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। তাই ভ্যাট খাতেই আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ভ্যাট বাবদ ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। ভ্যাট খাতে চলতি অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারিত আছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার।

আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে আয়কর খাতে। আয়কর খাতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্য থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। এবার আয়করের সংশোধিত লক্ষ্য হলো ৯৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে শুল্ক খাতে লক্ষ্য বাড়ছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে শুল্ক খাতে সংশোধিত লক্ষ্য হলো ৭৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

এদিকে গত পাঁচ বছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। অথচ এই পাঁচ বছরে রাজস্ব খাতে তেমন বড় কোনো সংস্কার আনা হয়নি। নতুন ভ্যাট আইন ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চালু হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল দেড় লাখ কোটি টাকা। ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্য বেড়ে আগামী অর্থবছরে সোয়া ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হচ্ছে। কিন্তু সেই পুরোনো ‘ঢাল-তলোয়ার’ দিয়ে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআরকে প্রতিবছর যে লক্ষ্য দেওয়া হয়, তা কখনোই আদায় হয় না। এ কারণে পরে তা সংশোধন করা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতেও কষ্ট করতে হয় এনবিআরকে। তাই মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে করের পরিমাণ কমছে। এনবিআরে রাজস্ব আদায় বাড়াতে তাই রাজস্ব খাতে সংস্কারের ওপর জোর দেন সেলিম রায়হান।

এদিকে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হলেও তা কখনো ছুঁতে পারে না এনবিআর। চলতি অর্থবছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থেকে ক্রমেই পিছিয়ে গেছে এনবিআর। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসেই (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। জুলাই-মার্চ সময়ে শুল্ক, কর ও ভ্যাট আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্য অর্জনে এখন শেষ তিন মাসে এনবিআরকে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে।