ব্যাটারির শক্তিতে বিস্কুটে সাফল্য

আলো আলো, বেশি আলো, শব্দে শব্দে, মন মাতাল, অলিম্পিক অলিম্পিক ব্যাটারি—সাড়াজাগানো এ বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলটি এখনো নিশ্চয় অনেকের মনে গেঁথে আছে। বিজ্ঞাপনটির মডেল ছিলেন অভিনেত্রী মিতা নূর। তিনি এখন আর বেঁচে নেই, অলিম্পিক ব্যাটারির ব্যবসার ‘বেশি আলোও’ আর নেই। ব্যাটারির ব্যবসার রাজা থেকে অলিম্পিক এখন বিস্কুট, কনফেকশনারি ব্যবসায় বাজারের সেরা কোম্পানি। ব্যবসার ধরন বদলানোর পাশাপাশি নামেরও বদল ঘটেছে কোম্পানিটির।

১৯৭৯ সালে যাত্রার শুরুতে কোম্পানিটির নাম ছিল বেঙ্গল কার্বাইড লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে নাম বদল করে হয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ওই বছর থেকে বিস্কুট ও কনফেকশনারি ব্যবসায় নাম লেখায় প্রতিষ্ঠানটি। তাতে সাফল্যও আসে কয়েক বছরে। এরপর ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন পণ্য ও উৎপাদন লাইন। এর আগে ১৯৮৭ সালে কোম্পানিটি তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফুডসের নামে সয়াবিন তেল ও ভেজিটেবল ঘি বাজারে আনে।

কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের নয়টি বিস্কুট, তিনটি কনফেকশনারি, একটি বেকারি, একটি স্ন্যাকস ও একটি নুডলস উৎপাদনের আলাদা আলাদা লাইন রয়েছে। কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯টি বিস্কুটের লাইনে অলিম্পিক এনার্জি প্লাস, নাটি, টিপ, হাইলাক্স, ফাস্ট চয়েজসহ ৩২ ধরনের মজাদার বিস্কুট উৎপাদিত হয়।

 আয়ের ৯৭% খাদ্যপণ্যের দখলে

অলিম্পিকের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে বছরে কোম্পানিটির যে আয় হয়, তার প্রায় ৯৭ শতাংশই আসে বিস্কুট, কনফেকশনারি, স্ন্যাকসসহ খাদ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে। বাকি ৩ শতাংশের মতো আয় আসে ব্যাটারির ব্যবসা থেকে। অর্থাৎ ব্যাটারির আলো যেন এসে পড়েছে কোম্পানিটির বিস্কুটসহ খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়। অলিম্পিক ও অলিম্পিক গোল্ড—এ দুই নামে ব্যাটারি বাজারে রয়েছে কোম্পানিটির। ব্যাটারির জন্য রয়েছে কোম্পানিটির আলাদা তিনটি উৎপাদন লাইন। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে কোম্পানিটির চারটি কারখানা। এসব কারখানায় প্রায় সাত হাজার লোক কাজ করেন।

কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, দেশের প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের বিস্কুট ও কনফেকশনারির বাজারের ৫০ শতাংশই অলিম্পিকের দখলে। বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে দশম বিস্কুট উৎপাদন লাইন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন বিস্কুট, কনফেকশনারি, বেকারি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি মোট আয় করে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা এসেছে বিস্কুট, কনফেকশনারি, বেকারি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে।

 পাঁচ বছরে মুনাফা দ্বিগুণ

কোম্পানির সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে েদড়গুণ আর মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

শেয়ারবাজারে অলিম্পিক

১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি বর্তমানে ভালো মৌলভিত্তির ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত একটি কোম্পানি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে ৩০টি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কোম্পানিটি। প্রায় ২০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির ২০ কোটি শেয়ার রয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষের হাতে, যার মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিদেশি-প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও নেতৃত্বে রয়েছেন দুই ভাই। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ভাই ও মোবারক আলী। এর মধ্যে এক ভাই চেয়ারম্যান ও অন্য ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২৭০ টাকা। শেয়ারধারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিটি। গত জুনে এটির আরেকটি আর্থিক বছর শেষ হয়েছে।