ঘটনাটি অভূতপূর্ব ইতিহাসে প্রথম

মনে হচ্ছে, পৃথিবীজুড়ে আর্থিক বাজার শূন্য কিংবা নেগেটিভ সুদের হারের আরেকটা ধারায় প্রবেশ করেছে। নিম্ন সুদের হারের যে সংস্কৃতি একসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো শুরু করেছিল, ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেই সংস্কৃতিকে ধারণ করা শুরু করেছে। তার প্রথম ধাপে মর্টগেজ ঋণের ওপর সুদের হারে তার প্রভাব পরিলক্ষিত।

এই প্রথমবারের মতো ডেনমার্কের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তার মর্টগেজ ঋণের ওপর নেগেটিভ সুদের হারের চর্চা করা শুরু করল। এই অভূতপূর্ব ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম। জিসকে ব্যাংক (Jyske Bank) তার ১০ বছর মেয়াদি মর্টগেজ ঋণের সুদের হার করেছে (-)০.৫%। অর্থাৎ কেউ যদি ১০ বছরের জন্য মর্টগেজ ঋণ নেয়, তাহলে তাকে ঋণের চেয়ে কম পরিমাণ টাকা ফেরত দিতে হবে!

বছরের পর বছর ধরে পৃথিবীজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যে সহজ নীতি নিয়েছিল, সেটা অর্থনীতির তত্ত্বগুলোকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে দিচ্ছে। এটা সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় ইউরোপজুড়ে, যেখানে এই মুহূর্তে মর্টগেজ ঋণের সুদের কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০০০ সালের পরে এত কম সুদের হার আর কখনোই ছিল না। মোটের ওপর ইউরোজোনের প্রায় ৭০ শতাংশ দেশ এই বছর মর্টগেজ ঋণের ওপর সুদের হার কমিয়েছে। 

পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মর্টগেজ সুদের হার কমের দিকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে এখন ৩০ বছরমেয়াদি মর্টগেজ সুদের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০০৬ সালের পর সর্বনিম্ন। মর্টগেজ ব্রোকাররা মর্টগেজ লোনের আবেদন সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। একই ভাবে মর্টগেজ ঋণে ফ্রান্সে সুদের হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, জাপানে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং জার্মানিতে ১ শতাংশের নিচে। এটা জার্মানির ইতিহাসে সবচেয়ে কম এবং যেভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমাচ্ছে, মর্টগেজ ঋণের সুদের হার শূন্য শতাংশ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, ব্যাংকগুলো এত কম সুদের হার নিয়ে কীভাবে টিকে আছে। আসলে ব্যাংকগুলো তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাজ থেকে শূন্য কিংবা নেগেটিভ হারে ধার করা শুরু করেছে। সুতরাং, এটার প্রভাব পড়ছে তাদের ঋণ দেওয়ার হারের ওপর। আবার যদিও সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি কিংবা নেগেটিভ, বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস চার্জ যোগ করে ব্যাংকগুলো তাদের আয়কে সমন্বয় করছে।