আমদানির পথে ১ লাখ ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত দেড় মাসে ১ লাখ ৩৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি (টেকনাফ স্থলবন্দর ছাড়া) হয়েছে। এ হিসাবে আমদানির প্রক্রিয়ায় আছে ১ লাখ ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র ও রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পেঁয়াজের মতো কৃষিপণ্য আমদানির জন্য প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে আমদানির অনুমতি নিতে হয়। এটি কৃষিপণ্য আমদানির প্রাথমিক ধাপ। অনুমতি নেওয়ার পর ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হয়। আমদানির অনুমতি নেওয়া হলেও সব পণ্য দেশে আসার নিশ্চয়তা নেই। জাহাজে পণ্য ওঠানোর পরই মূলত নিশ্চিত হওয়া যায় আমদানি পণ্য দেশে আসছে কি না।

আমদানির অনুমতি নেওয়ার পর কত ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তা থেকে আমদানির মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে অক্টোবর মাসে পেঁয়াজের ঋণপত্র খোলা হয় ২১ হাজার ৩৫৬ টনের। নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। যে পরিমাণ পেঁয়াজের আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে, এর বেশির ভাগের ঋণপত্র খোলা হয়েছে নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে।

সবচেয়ে বেশি আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে মিসর থেকে। দেশটি থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়। এর ৫৫ হাজার টনই এস আলম গ্রুপের। দ্বিতীয় শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে চীন। দেশটি থেকে প্রায় ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। পরের অবস্থান তুরস্ক। দেশটি থেকে সাড়ে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়। আমদানির অনুমতিপত্র নেওয়ার তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে পাকিস্তান। দেশটি থেকে প্রায় ১১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান থেকেও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ আমদানির অনুমতিপত্র নেওয়া হয়েছে ৩০ অক্টোবরের পর থেকে। প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিচ্ছেন। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র দ্রুত দেওয়া হচ্ছে।

আমদানির অনুমতি নেওয়ার পর এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আসবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানির অনুমতি, ঋণপত্র খোলা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে পেঁয়াজ বোঝাইসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে এসব পেঁয়াজ বন্দরে পৌঁছাতে প্রায় এক মাস বা তারও বেশি সময় লাগার কথা। তাই এখনই দ্রুত সরবরাহ বাড়ছে না। এ মাসের শেষে ও ডিসেম্বরে এসব পেঁয়াজের বেশির ভাগই দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য হাফিজ করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ভারতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা গোলাপি পেঁয়াজ আমদানিতে কঠোর শর্ত থাকায় তাঁরা ফিরে এসেছেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় ঋণপত্র খুলে পণ্য আমদানি হয় না। ফলে কৃষিপণ্য পেঁয়াজের আমদানির জন্য অনুমতিও নিতে হয় না। ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে এক চালানে ৫০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা যায়। তাতে খুব দ্রুত পণ্য আমদানির সুযোগ আছে দেশটি থেকে। আমদানির অনুমতিপত্র ছাড়া টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গতকাল রোববার পর্যন্ত খালাস হয়েছে ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ। এ হিসাবে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত দেড় মাসে দেশের সব শুল্ক স্টেশন দিয়ে খালাস হয়েছে সাড়ে ৫৩ হাজার টন পেঁয়াজ।