দেশেই তৈরি হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি, কারখানা মিরসরাইয়ে

প্রতীকী ছবি

দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এ কারখানার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশি ব্র্যান্ড নামে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আনতে চায় তারা।
বাংলাদেশে গাড়ি তৈরির এ কারখানায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদার চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড। এটি চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতার একটি। তাদের আবার জাপানের হোন্ডা, নিশান, ফ্রান্সের সিটরয়েনসহ জাপানি ও ইউরোপীয় কয়েকটি গাড়ি নির্মাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কারখানা রয়েছে।
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর ২০২০ সালের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দুই হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯৫ নম্বর ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ডংফেং বছরে ১ হাজার ৪৬০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা।

  • বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে উত্তরা মোটরস ও জিপিএইচ ইস্পাতের স্টার অ্যালাইড ভেঞ্চার ৫০ একর করে জমি নিয়েছে

  • আগ্রহী রানার অটোমোবাইল ও ইফাদ অটোস

  • আলোচনায় মিতসুবিশি ও কাওয়াসাকি

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, আর্থিকসহ নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে। এর চেয়ারম্যান এ মান্নান খান, যিনি বেসরকারি মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়ি সংযোজন নয়, উৎপাদন করব। মূল্য সংযোজন দাঁড়াবে ৭০ শতাংশের মতো।’ তিনি বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ির বড় বাজার তৈরি হবে। এটা মাথায় রেখেই আমাদের এই বিনিয়োগ।’
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ জমি নিয়েছে মোট ১০০ একর। বিনিয়োগের লক্ষ্য এক হাজার কোটি টাকা। এ জমিতে তারা গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি তৈরির জন্য আলাদা দুটি কোম্পানি গঠন করে আলাদা কারখানা করছে। একটির নাম বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড, যার অংশীদার হংকংয়ের জিয়াংসু রুইহং লিথিয়াম কোম্পানি লিমিডেট। আরেকটির নাম মোটর টেকনোলজি লিমিটেড, যার অংশীদার চীনের উহান সায়ান পাওয়ার টেকনোলজি কোম্পানি।


বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ জানায়, তাদের কারখানার ভৌত কাজ ৬০ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। যন্ত্রপাতি অনেকটাই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে গেছে। চীনা, ইউরোপীয় ও কোরীয় কর্মী নিয়োগ শেষ। তারা বছরে ৩৫ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেট কার, ৫০ হাজার তিন চাকার যান ও ১ লাখ ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে।
তবে হঠাৎ করে অর্থায়ন নিয়ে একটি জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের (বিআইএফএফএল) নেতৃত্বে তিনটি ব্যাংকের ৩৩২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। কিন্তু মাঝপথে এসে তারা জমি ইজারাসংক্রান্ত জটিলতায় ঋণ দিতে চাইছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এ মান্নান খান বলেন, ‘ঋণ দাতারা বলছে বেজার কাছ থেকে ইজারা নেওয়া জমিতে বিনিয়োগকারীর স্বত্ব নেই। আমরা বিষয়টির একটা সুরাহা চাই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে গাড়িশিল্প-সংক্রান্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা মোটরস নিয়েছে ৫০ একর। তারা বিনিয়োগ করবে ২৮৭ কোটি টাকা।

ইস্পাত খাতের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাতের স্টার অ্যালাইড ভেঞ্চার টায়ার কারখানার জন্য ৫০ একর জমি নিয়েছে। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব ৭৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রানার অটোমোবাইলস ও ইফাদ অটোস জমি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছে বেজা।

ইস্পাত খাতের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাতের স্টার অ্যালাইড ভেঞ্চার টায়ার কারখানার জন্য ৫০ একর জমি নিয়েছে। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব ৭৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রানার অটোমোবাইলস ও ইফাদ অটোস জমি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছে বেজা। বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে জাপানের সুপরিচিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশির ভাইস প্রেসিডেন্ট এ বছরের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পরিদর্শন করেছেন। জাপানের আরেক গাড়ি নির্মাতা কাওয়াসাকিও বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে বেজা।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে গাড়ি নির্মাণের একটি কেন্দ্র বা হাব গড়ে তুলতে চায় বেজা। এ জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জমি দেবে সংস্থাটি। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গাড়ি নির্মাতাদের জন্য আরও ৫০০ একর জমি রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাণিজ্যিক যান ও মোটরসাইকেলশিল্প স্থাপনের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই। শুধু বাংলাদেশের বাজার নয়, আশপাশের দেশেও গাড়ি, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে তৈরি করে রপ্তানি করা যেতে পারে।