হরতাল-অবরোধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

হরতাল–অবরোধ ও নৈরাজ্য বন্ধের দাবিতে গতকাল ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ সড়কের নারায়ণগঞ্জ আদালতের সামনে নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন l প্রথম আলো
হরতাল–অবরোধ ও নৈরাজ্য বন্ধের দাবিতে গতকাল ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ সড়কের নারায়ণগঞ্জ আদালতের সামনে নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন l প্রথম আলো

বছরের শুরু থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাটবাজারে ক্রেতা না থাকায় ধান, আলু, শীতকালীন সবজি, দুধ, ফুল প্রভৃতির ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাভ তো দূরে, উৎপাদন ব্যয় এমনকি জমি থেকে পণ্য তোলার খরচও তুলতে পারছেন না তাঁরা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বর্তমান সহিংসতা: কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষের ওপর অভিঘাত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে তাঁরা স্থানীয় পর্যায়ে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য আরও হিমাগার স্থাপন, হরতাল-অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনে শহর এলাকায় বিক্রি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কৃষি শ্রমিক অধিকার মঞ্চ আয়োজিত এ আলোচনায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও মানবাধিকারকর্মী, কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতা অংশ নেন। এতে সঞ্চালনা করেন কৃষি শ্রমিক অধিকার মঞ্চের সভাপতি অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। আলোচনার শুরুতেই কাজী খলীকুজ্জমান কৃষি শ্রমিক অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, রংপুর ও রাজশাহী জেলার কয়েকজন কৃষক পরিবারের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। এমনই একজন মানিকগঞ্জের কৃষক শাহীন মিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাহীন মিয়া চার বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও বেগুন চাষ করে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা লোকসানে আছেন। আগে আড়তদারেরা এসে পুরো খেতের ফসল কিনে নিতেন। আর এখন বাজারে নিয়ে গেলেও পাইকার মিলছে না। প্রথম দিকে ফুলকপি, বাঁধাকপি পাঁচ-সাত টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এখন দু-তিন টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না।

সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সবজিচাষিরা। ক্রেতা না থাকায় হাটেই সবজি ফেলে যাচ্ছেন চাষিরা। বাঁধাকপি, শালগম, মুলা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে উত্তরবঙ্গে আলু তোলার সময়। অবরোধের আগে যে আলু ১০-১২ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে পাঁচ-ছয় টাকায়। দাম না পাওয়ায় আলু তোলা বন্ধ রেখেছেন অনেক চাষি। কৃষকদের মতো শ্রমজীবী মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থা ওয়েব ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মহসিন আলী বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় সার যাচ্ছে না, সেখানে ভর্তুকি দিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া দরকার। তা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া কৃষকদের ঋণ নবায়নের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী পরিচালক নিলুফার বানু বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে শ্রমজীবী মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রতিদিন। প্রথম প্রথম কয়েক দিন আলোচনা হলেও পরে কেউ খোঁজ রাখে না যে তাদের পরিবার কীভাবে চলছে। কিন্তু এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করে তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হতেন। এ জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘প্রতিদিনই আগুনে ঝলসে, পুড়ে মরছেন সাধারণ মানুষ। আমরা এসব নিরবে সহ্য করতে পারি না। এসব বন্ধে নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে সক্রিয় প্রতিরোধ করতে হবে।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন কর্মজীবী নারী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি মুশফিকুর রহমান, ধরিত্রী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আদন ইসলাম, রংপুরের মনোহর আইসিএম কৃষক ক্লাবের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনায় যেসব প্রস্তাব উঠে এসেছে, সেসব নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলে জানান কাজী খলীকুজ্জমান।