প্রাইজবন্ড কিনুন জমানো টাকায়

তিল তিল করে কিছু টাকা জমিয়েছেন, কিন্তু ভেবে পাচ্ছেন না কোথায় খাটাবেন। চিন্তা কী, প্রাইজবন্ড কিনে রাখুন। যেকোনো সময় আপনি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করতেই পারেন। কিন্তু টাকা কম হলে তো এফডিআরও করা যায় না। অল্প টাকাওয়ালাদের জন্য মোক্ষম বিকল্প প্রাইজ বন্ড।
টাকা একটু বেশি হলে এবং তুলনামূলক ঝুঁকি নিতে চাইলে আপনার জন্য খোলা আছে শেয়ারবাজার। একটি বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) হিসাব থাকলেই হলো। ভালো কোম্পানি দেখে শেয়ার কিনে ফেলুন আর অপেক্ষা করুন কবে ওই শেয়ারের দর বাড়ে। আরও পথ আছে। সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। এখনো ভালো মুনাফা পাওয়া যায় সঞ্চয়পত্রে। যদিও সবার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে না সরকার।
কখনো এক ঝুড়িতে যেমন সব ডিম রাখতে নেই, পুরো বিনিয়োগও এক জায়গায় করতে নেই—বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা সব সময়ই এই পরামর্শটি দিয়ে থাকেন। একে ন্যূনতম আমলে নিয়ে হলেও আপনি প্রাইজবন্ড কিনে রাখতে পারেন এবং যাচাই করে দেখতে পারেন ভাগ্যটাকে।
হ্যাঁ, মাত্র ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড কিনে পেয়েও যেতে পারেন সর্বোচ্চ পুরস্কার ৬ লাখ টাকা। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ‘বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড’ নামে প্রাইজবন্ড চালু করে।
প্রাইজবন্ডকে লটারি বন্ডও বলা হয়। তবে এই লটারি সেই লটারি নয়। অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকে ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলের প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন ‘যদি লাইগ্যা যায়’-এর লটারি নয়। যেকোনো সময় এই প্রাইজবন্ড ভাঙিয়ে টাকা ফেরত নেওয়া যায়। ভাঙানো ও কেনা—দুটিই করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ক্যাশ অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে।
১৯৫৬ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রথম চালু হয় প্রাইজবন্ড। বাংলাদেশে ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড প্রথম চালু হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানেরগুলো তুলে নেওয়া হয়।
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয় বছরে চারবার: ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত একটি কমিটি ড্র অনুষ্ঠান করে থাকে। তবে কেনার দুই মাস পার হওয়ার পর প্রাইজবন্ড ড্রর আওতায় আসে।
ড্র অনুষ্ঠানের দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করা যায়। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।
প্রাইজবন্ডে প্রতি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে, যার মূল্যমান ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথম পুরস্কার একটি ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার একটি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার দুটি ১ লাখ টাকা করে, চতুর্থ পুরস্কার দুটি ৫০ হাজার টাকা করে এবং পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা করে।
জেতার পর মূল বন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডার দেওয়া হয়। তবে পুরস্কারের টাকার ওপর কর দিতে হয় ২০ শতাংশ।
প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। ভারত ও পাকিস্তানে ১০০ থেকে ৪০ হাজার রুপি মূল্যমানের আট ধরনের প্রাইজবন্ড থাকলেও বাংলাদেশে ২০ বছর ধরেই রয়েছে শুধু ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড।
প্রাইজবন্ড ড্র কমিটির সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মাছুম পাটোয়ারী প্রথম আলোকে জানান, দেশে ৪ কোটি ৪০ লাখ পিস প্রাইজবন্ড রয়েছে এবং সরকারের পক্ষে প্রাইজবন্ডের যাবতীয় কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চাহিদা অনুযায়ী প্রাইজবন্ডের সরবরাহ নেই এবং ব্যাংক ও ডাকঘরের কর্মকর্তারা প্রাইজবন্ড কেনাবেচায় অনীহা প্রকাশ করেন—জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহার কাছে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে বলে তিনি প্রথম আলোকে জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদাপত্র অনুযায়ী বাজারে প্রাইজবন্ড বিক্রি করা হয়। যদি চাহিদা থাকে, আরও বেশি প্রাইজবন্ড ছাপানো যাবে।’
* দেশে ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড প্রথম চালু হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানেরগুলো তুলে নেওয়া হয়
* ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর ড্র। কেনার দুই মাস পার হলে প্রাইজবন্ড ড্রর আওতায় আসে