দেশে ৯.১% তরুণ-তরুণী বেকার

বাংলাদেশের যুবসমাজের ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেকার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই হারে বেকার আছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক যুবসমাজের বেকারত্ব নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের এ চিত্র উঠে এসেছে।
কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও শ্রমশক্তি নিয়ে জরিপ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য দিয়ে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ যুবক-যুবতী। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের যুব শ্রমশক্তি ধরে বিবিএস। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, এ বয়সী ১৯ লাখ ৩৯ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ করেন না। তাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজও করার সুযোগ পান না, অথচ তাঁরা সব সময়ই কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকেন।
এদিকে দেশের কর্মক্ষম যুবসমাজকে কাজে লাগাতে জাতীয় যুবনীতি, ২০১৬ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এই যুবনীতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই জাতীয় যুবনীতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে এ খসড়ার ওপর মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যুব বেকারত্বের হার অনেক বেশিই। কেননা, বাকি যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই ছদ্মবেকার। অনেকেই টিউশনি করেন, কিন্তু বেকার হিসেবে ধরা হয় না। এতে যুবশক্তির উৎপাদনশীলতার পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, শ্রমবাজারে যে ধরনের দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না শিক্ষাব্যবস্থা। জোগান ও চাহিদার গরমিল আছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের চেয়ে যুব বেকারত্ব বেশি এমন দেশের সংখ্যা অনেক। যেমন, ভারতের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ১০ দশমিক ৪ শতাংশই বেকার। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের পরই দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে যুব বেকারত্ব পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আফগানিস্তানে যুবকদের মধ্যে ২০ দশমিক ৮ শতাংশই বেকার। আর শ্রীলঙ্কায় ১৯ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ-তরুণী বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি নেপালে, এ হার মাত্র ৪ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভুটানে ১০ শতাংশ যুবক বেকার। এ তালিকায় মালদ্বীপ নেই।
বিশ্বব্যাংক বলছে, সারা বিশ্বে প্রায় ১৮০ কোটি যুবক-যুবতী কোনো কাজ করেন না। তাঁরা আবার পড়াশোনা কিংবা কোনো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। কিন্তু আগামী এক দশকে প্রায় ১০০ কোটি তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করবেন। বর্তমান শ্রমবাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষমতা অনুযায়ী মাত্র ৪০ শতাংশ তরুণ-তরুণী কাজ পাবেন। সুতরাং আগামী এক দশকে বিশ্বকে আরও ৬০০ কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ধনী দেশের তরুণ-তরুণীরাই বেশি বেকার। যুবসমাজের মধ্যে বিশ্বে সর্বোচ্চ ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেকার স্পেনে। এর মানে হলো, স্পেনে প্রতি ১০০ জন ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৫৮ জনই বেকার। গ্রিসে এই হার ৫৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে জাপানে যুব বেকারত্ব তুলনামূলক কম; মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ।
বিশ্ব অর্থনীতির ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে পরিচিত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যুব বেকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। চীনে এই হার সাড়ে ১০ শতাংশ আর যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া যুবক-যুবতীদের মধ্যে ফ্রান্সে ২৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, কানাডায় ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, রাশিয়ায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেকার।
আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি যুব বেকারত্ব দক্ষিণ আফ্রিকায়। আফ্রিকার অন্যতম এই ধনী দেশটিতে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ যুবক-যুবতীই বেকার। তবে আফ্রিকার আরেক দেশ রুয়ান্ডায় বিশ্বের সবচেয়ে কম যুব বেকারত্ব। দেশটির যুব বেকারত্বের হার দশমিক ৭ শতাংশ।