অ্যাপেএল পুরস্কার

পুরস্কারজয়ী তিন শিক্ষার্থী, বাঁ থেকে সাদমান মজিদ, মো. রওনক ইসলাম ও ফারহান সাদিক। ছবি: সুমন ইউসুফ
পুরস্কারজয়ী তিন শিক্ষার্থী, বাঁ থেকে সাদমান মজিদ, মো. রওনক ইসলাম ও ফারহান সাদিক। ছবি: সুমন ইউসুফ

৪ আগস্ট দিল্লির নেহরু প্লেসের ইরস হোটেলে দিনব্যাপী চলছিল এমবিলিয়ন্থ অ্যাওয়ার্ড ২০১৭-এর গ্র্যান্ড গালা ডিনার ও পুরস্কার বিতরণী পর্ব। এদিকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে বসে কম্পিউটার স্ক্রিনে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে বুঁদ হয়ে বসেছিলেন বাংলাদেশের তিন তরুণ। তাঁদের একটি অ্যাপও যে জায়গা করে নিয়েছিল এই প্রতিযোগিতার মূল পর্বে। অপেক্ষা তাই ফলাফলের। যদিও তাঁদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল অনুষ্ঠানস্থলেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের টার্ম পরীক্ষার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ফলাফল জানতে তাই কম্পিউটার স্ক্রিনই ভরসা। পুরস্কারজয়ীদের নামের সঙ্গে একসময় ঘোষিত হলো সেই তিন তরুণের দলের নাম, তাঁদের বানানো অ্যাপের নাম, আর বাংলাদেশের নাম। ‘আরলি স্টেজ’ ক্যাটাগরিতে ভারতের আরেকটি দলের সঙ্গে বিজয়ী হয়েছে তাঁদের বানানো অ্যাপ ‘হেল্প অ্যান্ড ক্লিক’।

সাদমান মজিদ, ফারহান সাদিক ও মো. রওনক ইসলাম। তিনজনের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে তাঁরা দলের নাম রেখেছিলেন ‘টিম আরএমএস’। সাদমান ও ফারহান পড়ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) যথাক্রমে কম্পিউটারকৌশল ও তড়িৎকৌশল নিয়ে। ওদিকে রওনক মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) এনভায়রনমেন্টাল, ওয়াটার রিসোর্সেস অ্যান্ড কোস্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। নটর ডেম কলেজে একসঙ্গে পড়ার সুবাদে তিনজন মিলে টুকটাক কাজ শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন একজোট হয়ে।

২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ভারতের ডিজিটাল এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডিইএফ) এই ‘এমবিলিয়ন্থ অ্যাওয়ার্ড’-এর আয়োজন করে আসছে। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা এবং মানুষের হাতে মোবাইলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার লক্ষ্যে ভিন্নধর্মী কিন্তু মৌলিক মোবাইল প্রযুক্তিগুলোকে স্বীকৃতি দিতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, বিকাশ, শিক্ষক ডটকম, ব্র্যাক, আইসিটি মন্ত্রণালয়, বইপোকা, বিবিসি জানালাসহ বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে। এ বছর ইউনেসকো, কোয়ালকম, মিন্ট ও ডব্লিউএসএর (ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ড) সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছিল ডিইএফ।

হেল্প অ্যান্ড ক্লিক প্রসঙ্গে ফারহান বললেন বিস্তারিত, ‘আমরা চিন্তা করেছিলাম এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন বানাব, যেটা ব্যবহার করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খবর তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে। সঙ্গে জরুরি সময়ে ব্যবহারের জন্য দেশের সব পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাংকের নম্বর, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ইমারজেন্সি নম্বর, কোথাও রাস্তা হারালে মুহূর্তের মধ্যে ম্যাপ ব্যবহারের সুবিধা—এই সবকিছুই থাকবে।’

বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করে বাংলাদেশের জন্য এই পুরস্কার বয়ে এনেছেন আরএমএস দলের তিন তরুণ। রওনক বললেন, ‘এ বছর এশিয়ার ৮টি দেশ থেকে ১০টি ক্যাটাগরিতে মোট ২৯৪টি আবেদন জমা পড়ে। আইআইটি, পণ্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন, এনডিটিভি, ব্র্যাক, জাইকা, টেলিনর এবং বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু সরকারি সংস্থাসহ মোট ১৯৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের অ্যাপ জমা দেয়।’

বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ১০টি ক্যাটাগরি থেকে মোট ২৫টি অ্যাপকে বিজয়ী হিসেবে মনোনীত করা হয় এবং ৪টি অ্যাপকে বিশেষ সম্মাননার জন্য বাছাই করা হয়। বিজয়ীরাসহ প্রতিযোগিতার সেরা ৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ আগস্ট দিল্লির সেই নেহরু প্লেসে-গ্র্যান্ড গালা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণ পেয়েই মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল এই তিন তরুণের।

ফারহান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আমরা ছাড়াও “গভর্নমেন্ট অ্যান্ড সিটিজেন” ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট “আমারএমপিডটকম” এবং ডিনেট, “হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং” ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ইউএসএইড বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাপ “আপনজন সগর্ভা”। প্রতিযোগিতায় “কৃষি ইয়োলো পেজ” এবং “ডিজিটাল মানুষ” নামে দুটি অ্যাপ বিশেষ সম্মাননা পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অ্যাপের সঙ্গে পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে এটাই আমাদের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল। আর সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বিজয়ী হতে পেরে আসলেই অনেক ভালো লাগছে।’

তারপর? সামনে কী করতে চান এই অ্যাপ নিয়ে? সাদমানের উত্তর, ‘বর্তমানে এই অ্যাপের প্রায় ১ হাজার ৫০০ ব্যবহারকারী আছেন। সামনে আমাদের লক্ষ্য একটাই, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই অ্যাপটি ১-২ মাসের মধ্যে প্লে স্টোরে আপলোড করা এবং সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা খুবই আশাবাদী যে বাংলাদেশ আইসিটি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।’