চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত

সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠেছে বিইউবিটিতে। ছবি: খালেদ সরকার
সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠেছে বিইউবিটিতে। ছবি: খালেদ সরকার

‘ক্লাস আর প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ততায় সারা দিন কেটে যায় ক্যাম্পাসে। বাড়ি ফিরে আবার মধ্যরাত পর্যন্ত আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কাজ করি। সিনিয়রদের দেখেই আমরা এসব শিখেছি। আমাদের অনেক ভাইয়া-আপু পাস করার আগেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে গেছেন...।’ হাসিবুল আমিনের কণ্ঠে গৌরবটা টের পাওয়া গেল। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে শেষ বর্ষে পড়ছেন তিনি। হাসিবুলের বক্তব্যকে জোরালো করতে পাশ থেকে যোগ দিলেন একই বিভাগের আরও দুজন—পুষ্পরানী ও রোকসানা। বললেন, ‘আমাদের এখানে সিএসই বিভাগের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। যাদের আগ্রহ আছে, তাদের কাজ শিখে নিতে সময় লাগে না। শিক্ষক আর সিনিয়ররা তো পাশে আছেনই।’ এই শিক্ষার্থীরা জানেন, দ্রুত বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। শুধু বইয়ের মধ্যে ডুবে থেকে এখন আর বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা।

শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে দারুণভাবে সক্রিয় বিইউবিটির শিক্ষার্থীরা। আইটি ক্লাব ও রোবোটিকস ক্লাবের পুরস্কারের পাল্লা বেশ ভারী। বিতর্ক ক্লাবও কম যায় না বলে জানালেন বিইউবিটির ছাত্র অনন্য মাসুদ। তাঁর ভাষ্য, ‘ক্লাবগুলোই তো আসলে ক্যাম্পাসটাকে মাতিয়ে রাখে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজে পড়াশোনার বাইরে ব্যস্ত থাকি আমরা।’

ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে আমরা হাজির হয়েছিলাম গত মঙ্গলবার। ঘুরতে ঘুরতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক ল্যাবগুলো চোখে পড়ে। ছোট ছোট অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন আছে, তেমনি টেক্সটাইলের শিক্ষার্থীদের জন্য আছে বিশাল আকৃতির সব যন্ত্র। গবেষণাগার বা কারখানার পরিবেশই যেন এখানে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। কাচঘেরা ঘরগুলোর বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী মুখগুলো চোখে পড়ল। একফাঁকে কথা হলো ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী আহসান আহমেদ, ইশফাক আর তমার সঙ্গে। আহসান বলছিলেন, ‘বিইউবিটিতে আমাদের হাতে-কলমে শেখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।’ তমা যোগ করলেন, ‘প্রকৌশল ও ফলিতবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রতিদিনই ব্যবহারিক ক্লাস থাকে। যারা টেক্সটাইলে পড়ে, তাদের নিজ হাতে সুতা তৈরি থেকে শুরু করে পোশাকের নকশা নিয়েও কাজ করতে হয়।’ টেক্সটাইল ল্যাবে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও কারও সঙ্গে কথা বলার ফুরসত মিলল না। তুলা-সুতা-রং নিয়ে পড়াশোনায় সবাই এত ব্যস্ত, কথা বলার সময় কোথায়!

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির পাঁচটি ফ্যাকাল্টিতে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। ব্যবহারিক ও নান্দনিক শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন শর বেশি শিক্ষক আছেন। ভালো ছাত্রদের উৎসাহ দিতে প্রতি সেমিস্টারেই বিভিন্ন বৃত্তি দেওয়া হয়, সে কথা শিক্ষার্থীরাই জানালেন। ক্যাম্পাসে আমাদের ‘গাইড’ হিসেবে কাজ করছিলেন জাহান, রায়হান ও নুসরাত। শীতের দুপুরে সূর্য যখন মাথার ওপরে উঠেছে, তখন রায়হান বললেন, ‘চলুন, এবার ক্যানটিন থেকে ঘুরে আসি।’ বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ভেতরে বিশাল ক্যানটিন। ক্যানটিনে শুধু খাওয়াদাওয়া হয়, ভাবলে ভুল করবেন। একদিকে পড়াশোনা, একদিকে গিটারের টুংটাং, আর অন্যদিকে প্রজেক্টের জন্য কাগজ কাটাকাটি—সব চোখে পড়ে এক জায়গায়। রায়হান বললেন, ‘আমাদের ক্লাস না থাকলে ক্যানটিনেই বেশির ভাগ সময় কাটে। গ্রুপ স্টাডি থেকে শুরু করে প্রেজেন্টেশনের কাজ, সব হয় এখানেই।’ শিক্ষার্থীদের হইচই, চিৎকারে মেতে আছে পুরো ঘরটা। ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে আমরা এবার অন্যদিকে পা বাড়াই।

সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠেছে বিইউবিটিতে। একদিকে প্রকৌশল ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত গবেষণাধর্মী কাজে। অন্যদিকে বিবিএর ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে শিখছেন ব্যবসার বিভিন্ন কৌশল। ভাষাশিক্ষায় ছেলেমেয়েদের দক্ষ করে তুলতে ক্যাম্পাসে আছে ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। কারিগরি দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি সৃজনশীল মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার সব আয়োজনই আছে এই শিক্ষাঙ্গনে।

ছায়া আদালতের কার্যক্রম
ছায়া আদালতের কার্যক্রম

ছায়া আদালত

বিইউবিটির ক্যাম্পাসে দেখা গেল আদালতের কার্যক্রম। আছে কাঠগড়া, মঞ্চের ওপর বিশাল চেয়ারে বসেছেন জজ সাহেব। এই ছায়া আদালতের (মুট কোর্ট) মাধ্যমেই কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুতি নেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আইনের ছাত্র রায়হান গাজী বললেন, ‘এই আদালত আমাদের ক্লাসরুম। আদালত যেভাবে পরিচালনা করা হয়, সেই একই পরিবেশ সাজানো হয় এখানে। আসামি, সাক্ষী, বাদী, বিচারক...সবই থাকে। এই চর্চা আমাদের পড়ালেখাটা আরও বাস্তবমুখী করে।’ ছায়া আদালতে সেদিন রাজসাক্ষীর ভূমিকায় ছিলেন মুশফিকা রাফা। ‘চরিত্র’ অনুযায়ী কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। আদালতের কার্যক্রম শেষে বললেন, ‘আইনজীবীদের মতো পোশাক পরে ক্লাসে হাজির হই আমরা। বিভিন্ন সত্যিকার কেস থেকে আমাদের শেখানো হয়।’

মিলনায়তনে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
মিলনায়তনে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে জোর

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালা বা প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো ক্লাবের আয়োজন লেগেই থাকে। বিবিএর শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসাইন, জাহিদ আল নোমান ও ইবনাত বশিরার সঙ্গে কথা হলো ক্যানটিনের সামনের করিডরে দাঁড়িয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সামনের সপ্তাহে নতুন কী আয়োজন হাজির করা যায়, এসব নিয়েই আলাপ করছিলেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের এসব আয়োজনের সুবিধার্থেই ক্যাম্পাসে আছে বেশ বড় একটা মিলনায়তন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ থেকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানোর মহড়াটা এখানেই সেরে নেন ছাত্রছাত্রীরা।

>
মো. আবু সালেহ
মো. আবু সালেহ

ক্যারিয়ার ও কর্মমুখী শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিই

মো. আবু সালেহ

উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি

এক দশক ধরে আমরা কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এই ভাবনা থেকেই আমাদের ল্যাবগুলো, আমাদের পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছে। ব্যবসা ও প্রযুক্তির শিক্ষাকে সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিইউবিটির টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে খুবই কম। স্বল্পমূল্যে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বমানের পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশের জন্য আমরা সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে শুরু করে নানা সৃজনশীল কাজের সুযোগ তৈরি করেছি। তাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিকতা আনার জন্য আমাদের শিক্ষকেরা নিরলস পরিশ্রম করছেন। আমরা চাই, বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা অবদান রাখুক। সে জন্য গবেষণা, গবেষণাপত্র তৈরি করাসহ নানা ব্যবহারিক কাজে আমরা ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করি। বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, হ্যাকাথন, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নেয়।