সুমাইয়ার সংকল্প

সুমাইয়া রহমান
সুমাইয়া রহমান

ক্যাম্পাসে কেন তিনি ‘মিস প্রেসিডেন্ট’, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল এক কথায়। কিন্তু যে ছবির সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে আলাপ, সে কথাই জানা হয়নি তখনো। ছবিটা ঢাকার নরওয়ে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়েছিল। যেখানে দূতাবাস কর্মকর্তা আর বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্টারপ্রাইজেসের প্রেসিডেন্ট রোকিয়া আফজাল রহমানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছিল আরও তিনজন নারীকে। ছবির বর্ণনায় সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরে তিন নারীকে বলা হচ্ছিল ‘অগ্রগামী’। তাঁদেরই একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমাইয়া রহমান।

ছবির প্রসঙ্গ উঠতেই সুমাইয়া বললেন, ‘ওহ, সেই ছবিটা। গত বছর নারী দিবসে ঢাকার নর্ডিক (নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক) দূতাবাস আমাকে যুবনেতা হিসেবে সম্মাননা জানিয়েছিল। আমাদের সম্মানে ঢাকায় যে নৈশভোজের আয়োজন করেছিল, ছবিটা সেখানেই তোলা।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া। এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। পড়াশোনা সামলে তিনি কীভাবে পরিবর্তনের কান্ডারি হয়ে উঠলেন সে এক ‘বড় গল্প’; যে গল্পের একটি অংশ ‘মিস প্রেসিডেন্ট’। ‘ব্যাপারটা আসলে তেমন কিছুই নয়, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি। এই পদের কারণেই বন্ধুরা তকমাটা দিয়েছে!’ বলছিলেন সুমাইয়া।

তাঁদের স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশ স্থানীয় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করে। সুমাইয়ারা দুই পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। উদ্যোগ সম্পর্কে খোলসা করে তিনি বললেন, ‘কাজ বলতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সামাজিক কাজে পুলিশকে যুক্ত করা। এই যেমন কিছুদিন আগে আমরা ক্যাম্পাসে জঙ্গিবাদ সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করলাম।’

ক্যাম্পাসের আরও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সুমাইয়া। শুধু যুক্তই নন, কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি যেমন বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাস মঞ্চে আর রাজপথে গণসংগীত গান, তেমনি নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের হয়ে গান আর ছবি আঁকা শেখান হরিজন পল্লির স্কুলপড়ুয়া শিশুদের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে ছুটে যান, আবার আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে মুট কোর্ট সোসাইটির (আরইউএমসিএস) সক্রিয় সদস্য; আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠন রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটিতেও।

আর ইউএন উইমেন? ‘ভুলেই গিয়েছিলাম, সংস্থাটির একটি প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক আমি।’ যোগ করলেন সুমাইয়া রহমান। নারী উন্নয়নে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন উইমেন। গত বছর সংস্থাটির কর্মসূচি ‘প্লে সেভেন’ আয়োজন করে দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড গড়েছেন সুমাইয়া। তাঁর সেই খবর প্রকাশ করা হয়েছিল ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এ। সারা বিশ্বের সাতজন কিংবদন্তি নারীর জীবনের গল্প নিয়ে থিয়েটার হচ্ছে ‘প্লে সেভেন’।

সুমাইয়ার পথ চলায় বাবা মো. হাবিবুর রহমান আর মা জাহানারা খাতুনের বাহবা পান সব সময়। সুমাইয়া বললেন, ‘সে জন্যই হয়তো পড়াশোনার ফাঁকে এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছি। সংগঠন আমাকে সব সময় নতুন কিছু ভাবতে শিখিয়েছে। মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই হয়তো শিক্ষক-পরিবার-সংগঠনের কর্মীরা অনেকে মনে করেন সমাজে সত্যিই কোনো পজেটিভ চেঞ্জ এনে দিতে পারব আমি।’

কথায় কথায় আরও অনেক সংকল্পের কথা শোনালেন সুমাইয়া। পড়াশোনা শেষে আইন পেশায় যুক্ত হওয়া, জাতিসংঘের হয়ে কাজ করার স্বপ্ন, নারীদের এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ...এমন আরও অনেক কিছু। সুমাইয়ার সংকল্প-স্বপ্ন পূরণ হোক। আমরা শুধু বলতে পারি—পরিবর্তনের পথিক সুমাইয়াকে অভিবাদন!