খেলায় মেতেছে প্রাঙ্গণ

ভলিবল টুর্নামেন্ট শেষ হলো কদিন আগেই। ছবি: সিফাত সান
ভলিবল টুর্নামেন্ট শেষ হলো কদিন আগেই। ছবি: সিফাত সান

ভলিবল মাঠে তখন তুমুল উৎসাহে চলছে অনুশীলন। খেলোয়াড়েরা খেলায় মগ্ন। মাঠের এক পাশে বসে থাকা দর্শকের ছোট্ট দলটার ‘পারফরম্যান্স’ও মন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে গল্প-আড্ডার পাশাপাশি তারা খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ খেলার মাঠ থেকে উড়ে এসে বল পড়ল কোনো দর্শকের মাথায়। ব্যস, ‘বেচারাকে’ নিয়ে শুরু হলো খুনসুটি। মাঠের অন্য দিকে তাকালে চোখে পড়ে, চলছে ক্রিকেটের অনুশীলন। বছরের শুরুতে এমন প্রাণোচ্ছলতা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কেন্দ্রীয় মাঠের চেনা দৃশ্য।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয় ১ জানুয়ারি। কিন্তু বছরের প্রথম দিন থেকে এখানে শুধু পড়াশোনাই নয়, একই সঙ্গে শুরু হয় খেলাধুলার উৎসব। ক্লাস শেষ হওয়ার পর খেলোয়াড়েরা তো বটেই, অন্য শিক্ষার্থীরাও চলে আসেন মাঠে। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে অনুশীলন আর আড্ডা, যেন এটাই তাঁদের প্রতিদিনের রুটিন। সবার যে মাঠে হাজির হতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বিকেলবেলা মাঠে হাজিরা দিতে না পারলে যে উৎসবের অংশ হওয়া যাবে না!

প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস জীবনের শুরুতেই জেনে ফেলেন, এখানে খেলাধুলা নিয়ে সবার মধ্যে একটা বাড়তি আগ্রহ আছে। দু–চার কথায় সহপাঠী আর সিনিয়রদের সঙ্গে পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এই খেলার মাঠেই। স্কুল-কলেজে যাঁরা খেলাধুলা করতেন, তাঁরা প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর একটা সুযোগ পেয়ে যান। আবার যাঁরা আগে খেলাধুলা করেননি, তাঁদের অনেকে অনুশীলন করে হয়ে যান দলের অপরিহার্য অংশ।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সিয়ান আল সিফাত বলছিলেন, ‘প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই জানতে পারি, ক্লাস শেষে সবাইকে মাঠে যেতে হবে। একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাঠে গিয়ে আনন্দটা টের পেলাম। কোনো খেলায় অংশগ্রহণ না করলেও আমরা খেলোয়াড়দের সাহায্য করি, পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গেও সময়টা ভালো কাটে।’

গত ২৫ জানুয়ারি পুরোনো খেলার মাঠে (ভিসির মাঠ) অনুষ্ঠিত হলো ছাত্র ও ছাত্রীদের পঞ্চম অন্তর্বিভাগ ভলিবল প্রতিযোগিতা’ ১৮। খেলার দিন একেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের বিভাগকে জেতানোর জন্য প্রত্যেক খেলোয়াড় প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন, মাঠে ঘাম ঝরিয়েছেন। অপর দিকে মাঠের বাইরে থেকে চিৎকার করে করে ক্লান্ত হয়েছে দর্শক-শিক্ষার্থীর দল। স্লোগান দিতে দিতে কারও কারও গলা ভেঙে গেছে, তাই বলে ড্রামস আর ভুভুজেলার শব্দ থামেনি।

ছাত্রীদের খেলায় প্রতিযোগিতা করেছে মোট ২০টি দল। আর ছাত্রদের খেলায় ২৮টি দলের জমজমাট লড়াই হয়েছে। একেক দলের খেলোয়াড়েরা একেক বিভাগের শিক্ষার্থী। অবশেষে ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ফাইনালে ছাত্রদের খেলায় জয়ী হয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, আর ছাত্রীদের খেলায় ট্রফি জিতে নেয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ।

উন্নয়ন অধ্যয়নের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পম্পি পল বলেন, ‘বিজয়ী হওয়ার অনুভূতি সব সময়ই বিশেষ কিছু। খুব আনন্দ করেছি কয়েকটা দিন। কিন্তু আবার খেলার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। খেলার সময়টা অসাধারণ কাটে। মনে হয় খুব তাড়াতাড়িই ভালো দিনগুলো চলে গেল।’

ভলিবল শেষ হলে সবাই মেতে ওঠে ক্রিকেট নিয়ে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে অন্তর্বিভাগ টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া হ্যান্ডবল খেলাও জমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক খেলা শেষে আরেক খেলা শুরু হয়, আবার দল বেঁধে মেতে ওঠেন একেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেমিস্টারের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর বিভিন্ন খেলাধুলা চলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই খেলাধুলায় সব রকম সহযোগিতা করে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাকেও প্রাধান্য দেওয়া হয় এখানে। শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘সেমিস্টারের শুরুর দিকে পড়ার চাপ কম থাকে। তাই এই সময়টাতেই আমরা খেলাধুলার আয়োজন করি।’