সেবার দরজা খোলা

রংপুর মেডিকেল কলেজ মেডিসিন ক্লাবের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
রংপুর মেডিকেল কলেজ মেডিসিন ক্লাবের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

এক কথায় ভালো কাজে অংশ নেওয়া, মানুষের উপকার করাই হলো মেডিসিন ক্লাবের কাজ। দেশের বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজেই এই ক্লাব আছে। আজ আমরা বলছি রংপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ক্লাবের কথা। ‘রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্তদান, ভ্যাকসিনেশন...আমরা এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়া, ত্রাণ বিতরণ, শীতে শীতবস্ত্র বিতরণ—এসব কাজেও আমরা আছি।’ বললেন রংপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা পার্থপ্রতিম সেন।
একটু পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী তাঁদের কলেজের হাসপাতালে রক্তের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছিলেন ‘মেডিসিন ক্লাব’। ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ঢাকার গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও মেডিসিন ক্লাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জয়দেব বসাক জানালেন, এখন মেডিসিন ক্লাব রয়েছে ২৭টি মেডিকেল কলেজে। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নওশিন নওয়ার। তিনি জানালেন, জরুরি রক্তের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন মেডিসিন ক্লাবের সেবা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়েছে।
এলাকাভেদে মেডিসিন ক্লাবগুলোর কাজে কিছুটা ভিন্নতা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁরা নিজেদের কার্যক্রম সাজিয়ে নেন। রংপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফাহমিদা নাঈম ইসলাম বললেন, ‘রংপুর এলাকায় ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগের প্রভাব আছে। তাই আমরা এই এলাকায় গোদ রোগের জন্য বিনা মূল্যে ওষুধ দিয়ে থাকি। হেপাটাইটিস-বি ও নারীদের জরায়ুর ক্যানসারের টিকাও আমরা দিই, তবে এ ক্ষেত্রে শুধু টিকার দামটা নেওয়া হয়।’ ‘থ্যালাসেমিয়া রোগীদের আমরা নিয়মিত রক্তের ব্যবস্থা করে দিই।’ যুক্ত করলেন ক্লাবের অর্থ সম্পাদক সুনন্দা সরকার।
ক্লাবের সদস্যরা জানালেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো কখনো কখনো তাঁদের এসব কাজে সহায়তা করে। আবার নিজেরা চাঁদা তুলেও নানা কার্যক্রম হাতে নেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই তরুণেরা মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটা ঝোঁক তো আছেই; সংগঠনের কাজের সুযোগে সেই চর্চাটা আরও ডানা মেলছে।
ক্লাবের সভাপতি সৌমি চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দুটি ইউনিট কাজ করে পুরো রংপুর বিভাগীয় অঞ্চলে। এই এলাকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কাজ করেন তাঁরা।
গত বছর উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা প্লাবিত হয়েছিল বন্যায়। সেই বন্যায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছে রংপুর মেডিকেল কলেজের এই ক্লাব। ক্লাবের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল মুকিত বলছিলেন সেই অভিজ্ঞতার কথা, ‘বন্যার সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষগুলোর অসহায়ত্ব আমরা কাছ থেকে দেখেছি। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। পানিবাহিত রোগের ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইনসহ আরও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম তাঁদের কাছে। এসব কাজ করতে গিয়েই বুঝেছি, মানুষ আসলে প্রকৃতির কাছে কতটা অসহায়।’
সংগঠনের কাজ করতে করতে এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মেডিসিন ক্লাব তো কেবল একটি ক্লাব নয়, পরিবারও। ক্লাসে পড়ার যে বিষয়গুলো দুর্বোধ্য মনে হয়, পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে সেগুলো সহজ হয়ে যায়। ওএসপিই (অবজেকটিভ স্ট্রাকচার্ড প্র্যাকটিক্যাল এক্সামিনেশন) নামে একটি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের। বিষয়টা অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই কঠিন। মেডিসিন ক্লাবের পক্ষ থেকে এই পরীক্ষার চর্চার ব্যবস্থাও করা হয়।