টানা ছয় বছর পিছিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) ফলাফলে এবারও পিছিয়ে আছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখার তুলনায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অনেকটাই খারাপ করেছেন বলে গত ছয় বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে। বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও কমছে পাসের হার।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে, এবার বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। যেখানে বোর্ডের গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সেখানে মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭৮ দশমিক ১২ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
গত বছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অথচ ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পাসের হার সেখানে ৮৬ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং মানবিক শাখায় ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
২০১২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেখানে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। অথচ মানবিক শাখায় এই হার ৭৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
২০১১ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সেখানে পাসের হার বিজ্ঞান বিভাগে ৭৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, মানবিক শাখার ৭৭ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পাসের হার ক্রমাগত কমে আসছে। ২০১১ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট ১৭ হাজার ৪১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। পরের বছর ২০১২ সালে এই বিভাগের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫৫৪ জনে। ২০১৩ সালে পরীক্ষায় অংশ নেন ২২ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষার্থী। এবার ২০১৪ সালে এই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৭৮৭ জনে। কিন্তু এর বিপরীতে পাসের হার ক্রমাগত কমেছে।
বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের বিপর্যয় নিয়ে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ আবদুস সামাদ মণ্ডল বলেন, এখন বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু আগের চেয়ে অনেক জটিল করা হয়েছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির অনেক বিষয় এখন এইচএসসি পর্যায়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষকেরা অনেকটাই অনাগ্রহী। বিজ্ঞানচর্চার অনুকূল পরিবেশও নেই। শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে বিজ্ঞানচর্চা করতে পারছেন না। আর শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো করে বিজ্ঞানচর্চা করারও উপায় নেই। তাঁদের প্রাইভেট পড়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন সব বিষয়েই প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। এটা অনেক অভিভাবকেরই সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না। এরই মধ্যে আবার পরীক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কেউ এখনো প্রস্তুত হতে পারেননি।
রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সায়েদুর রহমান বলেন, আসলে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যতখানি ক্লাসমুখী হওয়া দরকার, তাঁরা ততখানি ক্লাসমুখী নন। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে অভিভাবকেরা যদি একটু খোঁজখবর নেন, তাহলেই তাঁদের ক্লাসমুখী করা যাবে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সহযোগিতা পাওয়া গেলে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আর নতুন পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের বেশি করে ক্লাসে সময় দিতে হবে।