আরমান আছেন...

আরমান
আরমান

একটা সময় ছিল যখন বন্ধু ও এলাকার বড় ভাইদের ডাকে আরমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হতেন। কৌতুক ও গান শোনাতেন। টাকাপয়সা নয়, আরমানের কাছে তাঁদের ডাকটাই ছিল মুখ্য। তবে সম্মানী হিসেবেও মাঝেমধ্যে ৫০০ বা ১০০০ টাকা মিলত। তা দিয়ে সপ্তাহের হাত খরচটা চলে যেত।
দুই-তিন বছর আগের ঘটনা, তবুও এখন সবই তাঁর কাছে ‘দূর অতীত’। তাই বলে কি আরমান কোনো অনুষ্ঠানে যান না? মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার প্রতিযোগিতার সিজন ৯-এর রানারআপ আরমান এখনো হাজির হন নানা ধরনের অনুষ্ঠানে। দাপিয়ে বেড়ান এ জেলা থেকে ও জেলা। শুধু পরিবর্তন হয়েছে সম্মানীর বেলায়। আগের চেয়ে ১৫-২০ গুণ বেশি।
নিজেকে পুরোদস্তুর কমেডিয়ান দাবি করা এই ছেলেটির পুরো নাম কমরউদ্দিন আরমান। ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার কমেডিবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার সিজন ৯’-এ অংশ নিয়ে নিজেকে ঠিকঠাক চিনিয়েছেন, বুঝিয়েছেন কক্সবাজার সমুদ্রেসৈকতের কোলেপিঠে বড় হওয়া ছেলেটা কতটা প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। ওই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে যে কজন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন, তার মধ্যে আরমান আলাদা করে নজর কেড়েছেন। সেই ‘নজর’ লাগা শেষ অবধি ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে।
প্রতিযোগিতা নিয়ে একবাক্যে বললেন আরমান, ‘মীরাক্কেল আমাকে বদলে দিয়েছে। আমার জীবন, পরিকল্পনা, স্বপ্ন সবই।’
‘কেমন সেটা’ শুনতেই সম্প্রতি মুখোমুখি বসা হয়েছিল আরমানের। এখন কোথাও গেলেই মানুষ চিনে ফেলেন। আমাকেই প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আরমান না? ওই যে মীরাক্কেলের? তাঁদের প্রশ্ন সত্যায়িত করে দিই আমি।’ স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন তিনি।
তবে এ জীবনে প্রাপ্তিও কম নয়। বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া এক দম্পতি তাঁর একটি কৌতুক শুনে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। এ রকম অজস্র ঘটনা তাঁর জোকস শুনে ঘটেছে। আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি মীরাক্কেলের বিচারকেরা বাহবা দিচ্ছেন আরমানকে। তার বাইরেও কি কথা হয়নি? মীরাক্কেলের বিচারক ও অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিযোগিতার মাঝে একদিন ডেকে বলেছিলেন, ‘তুই যা করছিস, পুরো দুনিয়া জেনে গেছে। তুই শুধু চালিয়ে যা।’
এ রকম অজস্র অনুপ্রেরণা সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আরমান। কথা প্রসঙ্গে বললেন, প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর সময় নিজের ছিলাম, পরে দেশের হয়ে গেছি। মীর দা (মীর আফসার আলী, মীরাক্কেলের উপস্থাপক) যখন বলতেন, ‘কক্সবাজার, বাংলাদেশ থেকে কমরউদ্দিন আরমান, তখন নিজের রক্তের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করত। সেটা বোঝাতে পারব না।’
সেই অনুভূতি আর দেশকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আরমান। হাল ধরেছেন কক্সবাজার কমেডি ক্লাবের। কারণ মানুষের হাসি মুখ তাঁর কাছে বড় প্রাপ্তি। এ কারণেই প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর আগে জড়িত ছিলেন কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠিত বিনা মূল্যে শিশুদের ঠোঁট কাটা ও তালু কাটা ঠিক করে দেয় এমন একটি সংস্থার সঙ্গে। এখনো আছেন। ওই যে মানুষের হাসি মুখ দেখতে চাওয়ার লোভ আছে যে ছেলেটার, সে কি আর চাইলেই এসব থেকে দূরে থাকতে পারে।
আরও একটা কাজ করছেন তিনি। নিয়মিত গানের চর্চা। মীরাক্কেলেই দেখিয়েছেন নিজের গায়কি প্রতিভা। সেটাই ঝালাই করছেন তিনি। গান নিয়ে নানা ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিচ্ছেন সংগীতশিল্পী সমরজিৎ রায়ের কাছ থেকে। একই অঞ্চলে বাড়ি হওয়ার সুবাদে আরমানের কাছে যিনি ‘দেশি দাদা’।
ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা বললেন আরমান। ‘এই দেশে কমেডি নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। আমরা যাঁরা কমেডিকে ভালোবাসি, সবাই মিলে সারা দেশে কমেডি ক্লাব করার উদ্যোগ নিয়েছি। আর গান নিয়ে এগিয়ে যাব।’
এই দুটো নিয়েই ভবিষ্যতে আরমান থাকবেন মাঠে-ময়দানে। আড্ডার শেষে এমন তথ্যই দিলেন তিনি।