অস্কার হাতে এল কানে

কানে এসে অস্কার গ্রহণ করলেন ইরানি নির্মাতা আসগর ফরহাদি (বাঁয়ে), সঙ্গে তাঁর অস্কারজয়ী ছবি ‘আ সেলসম্যান’–এর অন্যতম প্রযোজক আলেক্সান্দর মালে–গি l ছবি: টুইটার
কানে এসে অস্কার গ্রহণ করলেন ইরানি নির্মাতা আসগর ফরহাদি (বাঁয়ে), সঙ্গে তাঁর অস্কারজয়ী ছবি ‘আ সেলসম্যান’–এর অন্যতম প্রযোজক আলেক্সান্দর মালে–গি l ছবি: টুইটার

কী বলা যেতে পারে একে? ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আসগর ফরহাদির সমুচিত জবাব? তা নয় তো কী! যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্টের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে অস্কার জিতেও সেটি হাতে নেওয়ার সুযোগ হয়নি ইরানের এই খ্যাতিমান নির্মাতার। কিন্তু কে জানত, চমকটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে তৈরিই ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তা থিয়েরি ফ্রেমু। ‘বঞ্চিত’ আসগর ফরহাদির কাছেই তিনি তুলে দিয়েছেন ৭০তম কানের উদ্বোধন ঘোষণার মর্যাদা।
গত বুধবার উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ফরহাদি বললেন, ‘আগামী ১২ দিনে আশা করছি বহু অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে আপনাদের। আশা করছি, এবারের উৎসবে এমন সব ছবি আপনারা দেখবেন, যে ছবিগুলো এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে মানুষের অবস্থা নিয়ে আপনাদের ভাবাবে।’ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন হলিউড অভিনেতা জনি ডেপ-কন্যা অভিনেত্রী লিলি-রোজ ডেপ।
আ সেপারেশন-এর মতো ছবি দিয়ে এরই মধ্যে সিনেমা ইতিহাসে নিজের নাম পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন ফরহাদি। সেলসম্যান (২০১৬) তাঁকে এনে দিয়েছে এবারের সেরা বিদেশি ভাষার ছবির অস্কার। এই ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল গত কান উৎসবেই। সেবার সেরা অভিনেতা ও সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার জিতেছিল সেলসম্যান।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগড়া দিলেও সেরা বিদেশি ভাষার ছবির অস্কার কিন্তু ঠিকই হাতে এসে গেছে আসগর ফরহাদির। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি নিশ্চিত করেছে, আসগর ফরহাদি তাঁর বহু প্রতীক্ষিত অস্কারমূর্তি হাতে নিয়েছেন এবারের কান উৎসবে। সেটি ফরহাদির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন একাডেমি অব মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ম্যারেডেথ শ্যায়।
ইশারার জাদু
দুই সময়ের দুই শিশু। তারা দুজনেই চায় জীবনটা পাল্টাতে। এ রকম এক গল্প নিয়ে ভিন্ন ধারার ছবি ওয়ান্ডারস্ট্রাক। টড হেনেস পরিচালিত কানের প্রতিযোগিতা বিভাগের এ ছবিতে অভিনয় করেছেন জুলিয়ান মুর। কাল গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছিল ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
১৮ মে দিনের প্রথম সংবাদ সম্মেলন ছিল এই ছবির। আকর্ষণ ছিলেন হলিউড অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর। বললেন, ‘ভিন্ন সময়ের ভিন্ন দুটো চরিত্র আমি এই ছবিতে করেছি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান এমন একটি চরিত্র করতে পেরে।’
মোটামুটি বলা যায়, জুলিয়ানকে বাদ দিলে ওয়ান্ডারস্ট্রাক-এর পুরো সংবাদ সম্মেলন ছিল ছবির শিশুশিল্পীদের দখলে। ইশারা ভাষা আর কথায় তারা মাত করে রেখেছিল পুরো সময়। সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এসেছে নেটফ্লিক্স প্রসঙ্গ।
আরও ছবি
শুরুর দিনের মতো কালও রোদ ঝলমলে একটি দিন কাটিয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দো ফাস্তিভালের সামনে ছিল সারা বিশ্ব থেকে উড়ে আসা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের ভিড়। প্রদর্শিত অন্য ছবিগুলোর মধ্যে ছিল আন্দ্রেই জিগনাৎসেভের লাভলেস ও মিকে তাকাশির ব্লেড অব দ্য ইমমরটাল।
দিবুসি থিয়েটার হলে ছিল ‘আঁ সার্তেন রিগার্দ’ (অন্য দৃষ্টিকোণ) বিভাগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ম্যাথিউ আমালরিকের বারবারা ছবির প্রদর্শনী দিয়ে পর্দা উঠেছে কান উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনের এই বিভাগের।
ধ্রুপদি কান বা ‘কান ক্ল্যাসিকস’ বিভাগে কাল প্রদর্শিত হয়েছে বেশ কিছু ছবি। এর মধ্যে ছিল রবিন রাইটের দ্য ডার্ক অব নাইট, বব ফসের অল দ্যাট জ্যাজ ও পিয়ের শেনালের নেটিভ সান।
মার্শ দু ফিল্মে বাংলাদেশি আড্ডা
দূর থেকে হাসছেন মানুষটা। হাসিটা খুব চেনা ঠেকল। পালে দো ফাস্তিভালের পাশেই পর্যটন অফিস। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। হাসিমুখে ‘চলে এলাম’ বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। কানে এসেছেন লন্ডন ঘুরে। বাংলাদেশের এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কানে এসেছেন ‘ঢাকা টু কান’ নামের একটি উদ্যোগে যোগ দিতে।
‘একসঙ্গে এত দেশের মানুষ অনেক জায়গায় দেখা যায়। কিন্তু এত দেশের শিল্পী একসঙ্গে এক জায়গায় আর তো দেখেছি বলে মনে হয় না।’ প্রথমবার কানে এসে মন্তব্য নাসির উদ্দীন ইউসুফের।
তাঁর সঙ্গে মার্শ দু ফিল্মের (সিনেমা বাজার) রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসতেই মিলল আরও বাংলাদেশিদের খোঁজ। কামার আহমাদ সাইমন লা’আতেলিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসেছেন। সঙ্গে স্ত্রী প্রযোজক সারা আফরীন। এসেছেন সামিয়া জামান, আহমেদ মুজতবা জামাল, মাহবুব রহমানও। সবাই এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। কান উৎসবে বাংলাদেশিদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ যে ক্রমে বাড়ছে, সেটা এখন চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়।