ব্যর্থতার কথা কেউই শুনতে চায় না

এবারে আমরা এ সপ্তাহে প্রচারিত সফল কয়েকটি অনুষ্ঠানের বিবরণ তুলে ধরব। ব্যর্থতার কথা কেউ শুনতে চায় না (কেউ কেউ মানতেও চায় না)। আমরা আলোচনা করি, যাতে নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং নিজেদের ভুলত্রুটি সংশোধনে সজাগ হতে পারেন।

৩ নভেম্বর বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে স্বাগতার উপস্থাপনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘ইচ্ছে গানের দুপুর’। অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন লুইপা।
লুইপা দুই ঘণ্টার অধিক সময় গান করেছেন এই অনুষ্ঠানে। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি থেকে শুরু করে লোকসংগীত, রাগপ্রধান, আধুনিক বিভিন্ন ধারার গান করেছেন এই অনুষ্ঠানে। পাশাপাশি করেছেন নিজের গানও। রবীন্দ্রসংগীত ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ থেকে নজরুলের ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’, ‘চোখে চোখে শুধু কথা বলো’, ‘জোছনা করেছে আড়ি’ ইত্যাদি সবই পরিচিত ও জনপ্রিয় গান এবং সব গানই পরিবেশন করেছেন ড্রামস, কিবোর্ড ও গিটারের সঙ্গে। তাঁর কণ্ঠ সুরেলা এবং পরিবেশনা ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ। কিন্তু সবার ওপরে যে দিকটি দর্শক-শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা হলো তাঁর নিরীক্ষাধর্মী উপস্থাপনা। পরিচিত সুরকে অনেকটা অবিকৃত রেখেই তিনি উপস্থাপনায় নতুন মাত্রা আনার চেষ্টা করেছেন। যন্ত্রসংগীতের সংগতেও প্রায় প্রতিটি গানেই ছিল অভিনবত্বের ছোঁয়া। বিশেষ করে ড্রামসে যিনি ছিলেন তাঁর পরিবেশনা ও নির্দেশনা যন্ত্র-সংগতকেও করে তুলেছিল নিরীক্ষাধর্মী, উপভোগ্য ও আকর্ষণীয়। একজন নবীন শিল্পীর কাছ থেকে এসব অনুষ্ঠানে আমরা যেমন উপস্থাপনা, পরিবেশনা ও নিরীক্ষা প্রত্যাশা করি, লুইপা সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একই দিনে সকালে এনটিভিতে এবং দুপুরে মাছরাঙা টিভিতে সরাসরি গান করেছেন তিনি। সকালে তাঁর উপস্থিতিতে ছিল স্নিগ্ধতা আর দুপুরে ছিল আধুনিকতা। মাঝে মাঝে তিনি গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। মনে হয়েছে, উপস্থাপনার দিকে না ঝুঁকে তাঁর গানেই আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত।

৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বিপাশা হায়াতের রচনায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি রূপালী দিনের গল্প। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আরিফ খান। অভিনয়ে আফজাল হোসেন, বিপাশা হায়াত, তৌকীর আহমেদ, প্রমুখ।

ছবির গল্প সংক্ষেপে এ রকম, নদীতে ভেসে আসা অচেতন বিপাশার আশ্রয় হলো আফজাল দম্পতির কাছে। সুস্থ হওয়ার পরও সে নিজের পরিচয় প্রকাশ করল না। সংসার বিবাগী আফজালের টানাটানির সংসার। স্ত্রী ব্যবসার প্রয়োজনে শহরে যায় এবং শহরেই ভাইয়ের বাসায় কয়েক দিন থেকে যায়। আর এ সুযোগেই সৃষ্টি হয় আফজালের সঙ্গে বিপাশার কাছে আসা। দ্বিধান্বিত বিপাশা তাঁর হৃদয়ার্তির কাছে পরাজিত হয়। আফজালের স্ত্রী ফিরে এলে সহানুভূতির স্থলে দেখা দেয় বৈরিতা। বিপাশা চিঠি লিখে ডেকে আনে স্বামী তৌকীরকে। আফজাল তা ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে না। নানা নাটকীয়তার পর সে রাতেই বিপাশার হাতে খুন হয় স্বামী তৌকীর। বিপাশা জানায়, তৌকীর দ্বিতীয়বারের মতো খুন করতে চেয়েছিল তাকে, সে তারই প্রতিশোধ নিয়েছে। এরপর বিপাশা নিজেও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

এককথায় বলা যায়, ছবিটি যথার্থ টেলিছবির বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেছে। ছবিটিতে সমাজ জীবনের বাস্তবতার পাশাপাশি মানুষের অন্তর্জগতের অনুরণনকে বিপাশা হায়াত সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সবার অভিনয়ই ছিল শক্তিশালী এবং চরিত্রানুগ। বিশেষ করে বিপাশার অভিনয় ছিল অনবদ্য। অনেক দিন পর তাঁর নিজের ছবির সুবাদে বিপাশার অভিনয় দেখার সুযোগ হলো দর্শকদের।

তারপরও দু-একটি অসংগতি আমাদের দৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে, যেমন বিপাশাকে তাঁর স্বামীর হত্যা করার অভিপ্রায়টি ছবিতে যুক্তিসংগত হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া আফজালের স্ত্রী তাদের দুজনকে বাসায় রেখে দিনের পর দিন শহরে ভাইয়ের বাসায় থেকে যাওয়াটাও অসংগতিপূর্ণ মনে হয়েছে। এ ছাড়া শেষে আত্মহত্যার বিষয়টিও দৃঢ়চেতা বিপাশার পরিণতি হিসেবে বেমানান মনে হয়েছে। অন্যদিকে মদ খেয়ে আফজালের মাতলামি, তৌকীরের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ, এ সব সিনেমাটি হয়েছে বটে, কিন্তু ছবির আবহের সঙ্গে মানায়নি। তারপরও বলব, অনেক দিন পর একটি সার্থক টেলিছবি দেখেছে দর্শক। ধন্যবাদ বিপাশা হায়াত ও নির্মাতা আরিফ খানকে একটি সুন্দর টেলিছবি উপহার দেওয়ার জন্য।
৩ অক্টোবর রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আদনান আদীব খানের রচনা ও এইচ এম আজিজের পরিচালনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো নাটক কমলা হাওয়াই শার্ট। অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, নাদের চৌধুরী, নাজনীন চুমকি, আবদুল্লাহ রানা প্রমুখ।

শতাব্দী ওয়াদুদ পেশাদার খুনি। টাকার প্রয়োজনে সে চেয়ারম্যানের হয়ে কাজ করে। চেয়ারম্যান যাকে খুন করতে বলে, তাকেই সে সরিয়ে দেয় পৃথিবী থেকে। আবদুল্লাহ রানা চেয়ারম্যানের বিপক্ষে গেলে চেয়ারম্যান কূটকৌশলে রানাকে কিছু না বলে নির্দেশ দেয় তার ছেলেকে হত্যা করতে। ওয়াদুদ বিব্রত হয়, কেননা রানার ছেলেটি তার নিজের ছেলের বন্ধু। প্রথমে সে রাজি হয় না, কিন্তু পরে চেয়ারম্যানের চাপে এবং টাকার লোভে রাজি হয়। চেয়ারম্যান এবার কাজ শেখার জন্য একজন সঙ্গী দেয় ওয়াদুদকে। ওয়াদুদ সেই সঙ্গীকেই দায়িত্ব দেয় রানার ছেলেকে হত্যার। সেদিন সন্ধ্যার পর বাজার থেকে কমলা রঙের শার্ট পরে আসবে ছেলেটি, সঙ্গে আছে তার নিজের ছেলেও। বাসায় বসে সে দুশ্চিন্তায় অস্থির হতে থাকে। শেষে দেখা যায় রানার ছেলেটি অক্ষত ফিরে এসেছে, আর শার্ট বদলের কারণে তার নিজের ছেলেটিকে হত্যা করেছে তার নতুন সঙ্গী। এই হলো নাটক।

নাটকটির গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ—সবই গতানুগতিক, তবে সবার অভিনয় যেন সেই গতানুগতিকতাকে অনেকটাই অতিক্রম করে গেছে। আরেকটি মন্তব্য করতে চাই, তা হলো নাটকের সবচেয়ে বড় নাটকীয়তা ছিল শেষ পরিণতিতে, কিন্তু সে নাটকীয়তা জমে ওঠেনি। কারণ, দর্শক সবই বুঝতে পারছিল, এরপর কী হবে, এরপর কী হবে।
আজ আমরা আলোচনা শেষ করব একটি অনুষ্ঠানের ওপর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য দিয়ে। অনুষ্ঠানটি সেলিব্রিটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’। নাজিম শাহরিয়ার জয়ের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়েছে ৪ অক্টোবর রাত ১১টায় এটিএন বাংলায়। এই অনুষ্ঠান ও উপস্থাপক জয়কে নিয়ে আমরা আগেও লিখেছি। কিন্তু এ দিনের পর্বটি যেন ছাড়িয়ে গেছে আগের ইমেজকেও। এদিন অতিথি ছিলেন লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। দুজন চৌকস অভিনয়শিল্পীর বাগ্মিতা এদিন উপভোগ করেছে দর্শক। অনেক কৌতূহলী প্রশ্ন ও উত্তর যেন জন্ম দিয়েছে আরও অসংখ্য কৌতূহলের। ভবিষ্যতে এই অনুষ্ঠানেই সে কৌতূহলের নিরসন হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।